
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী উত্তাপ ক্রমেই বাড়ছে। এমন এক প্রেক্ষাপটে, সবার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা করে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের প্রাক্তন নেত্রী উমামা ফাতেমা।
উমামার এই ঘোষণাটি শুধু সময়ের দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ নয়, বরং তার দীর্ঘদিনের ছাত্র রাজনীতি ও অধিকারকেন্দ্রিক কর্মতৎপরতার কারণেও এটি গুরুত্ব পাচ্ছে। বুধবার (৩০ জুলাই) রাত ৯টায় নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিস্তারিত স্ট্যাটাসে তিনি ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। তার এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় ওঠে।
উমামা ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী এবং কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। রাজনৈতিক সংগঠনের ভেতরে-বাইরে থেকে আমি সর্বদা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করে এসেছি।”
তিনি আরও জানান, ১ম বর্ষে থাকাকালীন সময়েই তিনি ‘বৈধ সিট আমার অধিকার’ নামক একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছিলেন, যা সেসময় সিট বৈষম্য এবং আবাসিক সমস্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনের নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। তার ভাষায়, “আমার এই স্বল্প পথচলার অভিজ্ঞতায় আমি উপলব্ধি করেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ধরনের পরিবর্তন ব্যতীত স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। আর এই পরিবর্তন আনতে পারে কেবল শিক্ষার্থীরাই।”
উমামা তার স্ট্যাটাসে ডাকসুর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারে সংঘটিত ও বৈধ একটি বডি, যেটি কেবল ছাত্র সংসদ।” তিনি মনে করেন, ডাকসু কেবল একটি নির্বাচন বা নেতৃত্ব তৈরির প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনা, দাবি-দাওয়ার প্রকৃত প্রতিফলনের প্ল্যাটফর্ম।
তার ভাষ্য, “ছাত্র সংসদে এমন নেতৃত্ব দরকার যারা কোনো রাজনৈতিক পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে অটল থাকবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল নেতা তৈরির কারখানা হিসেবে নয়, একটি গবেষণাবান্ধব, চিন্তাশীল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।”
উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, তিনি একটি ‘স্বতন্ত্র প্যানেল’ গঠন করতে চান। সেই প্যানেলের উদ্দেশ্য হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে গবেষণাভিত্তিক, চিন্তাশীল ও দূরদর্শী কর্মকৌশল গ্রহণ করা।
তিনি বলেন, “আমি এমন এক প্যানেল গড়তে চাই, যেখানে থাকবে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা, তাদের সমস্যা অনুধাবনে সক্ষম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত সংকট নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা শিক্ষার্থীরা। এটি হবে কোনো দলীয় ছত্রছায়ায় নয়, বরং স্বাধীনভাবে গঠিত একটি কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক দল।”
উমামা ফাতেমা তাঁর পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন, যারা সত্যিই শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার, সিট বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, এবং একটি নিরাপদ, মানবিক ও গুণগত শিক্ষার পরিবেশ গড়তে আগ্রহী, তারা যেন এই প্যানেলে যুক্ত হন।
তিনি লেখেন, “১ম বর্ষ থেকেই বৈধ সিটের আন্দোলন, ন্যায্য অধিকার ও শিক্ষার সুযোগে বৈষম্য দূর করতে যারা লড়েছেন, যারা আজও চান এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি মানবিক, জবাবদিহিমূলক এবং শিক্ষার মানসম্পন্ন পরিবেশে রূপান্তরিত হোক—তাদের আমরা আমাদের প্যানেলে আহ্বান জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সময় পর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নানা দিক থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয় ২০১৯ সালের মার্চে। এরপর নানা কারণে আর নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ ব্যবধানের পর আবারও ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এই প্রেক্ষাপটে, উমামার মতো অভিজ্ঞ, পরিচিত এবং মাঠে কাজ করা শিক্ষার্থীর প্রার্থী হওয়া ডাকসু নির্বাচনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকে।
অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করছেন, ডাকসু যদি সত্যিই শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়, তবে এমন প্রার্থীদের প্রয়োজন যারা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ ছাড়িয়ে সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের সমস্যা বুঝতে পারেন এবং তাদের জন্য কাজ করতে আগ্রহী।
এখন দেখার বিষয় হলো, উমামা ফাতেমার ঘোষণার পর অন্য প্রার্থীরা কী বার্তা দেন এবং ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের কতটা সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ