
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে সক্রিয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিস্তৃত মৌসুমি লঘুচাপের কারণে দেশের তিনটি বিভাগ—রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট—জুড়ে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সতর্কতামূলক তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিটি আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত, যেখানে বলা হয়েছে, শনিবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় উল্লিখিত বিভাগগুলোর অনেক জায়গায় ভারি (প্রতিদিন ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারি (প্রতিদিন ৮৮ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে পাহাড়ি ঢল, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও ভূমিধসের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, “বর্তমানে মৌসুমি লঘুচাপের কেন্দ্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং বাংলাদেশের খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। এর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আরও সক্রিয় হয়েছে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর আর্দ্রতা যুক্ত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এই কারণেই দেশের প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশেষ করে সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত বৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। এই অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল নেমে আসার সম্ভাবনা যেমন বেশি, তেমনি নীচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। ফলে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতের তথ্য তুলে ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী জেলায় সর্বোচ্চ ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সিলেটে ৪৮ মিলিমিটার, চট্টগ্রামে ৪২ মিলিমিটার, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৯ মিলিমিটার, চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ মিলিমিটার, টেকনাফে ৩৬ মিলিমিটার, নেত্রকোণায় ৩৫ মিলিমিটার এবং ঢাকায় ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসব তথ্য থেকেই স্পষ্ট যে দেশের অধিকাংশ এলাকাই বৃষ্টির প্রভাবে ভিজে উঠেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বর্তমান এই ভারি বৃষ্টিপাতের ধারা আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে পূর্বাভাসে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণের সম্ভাবনা পুরোপুরি নাকচ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারী বর্ষণ কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ি এলাকার মানুষদের প্রতি ভূমিধস ও হঠাৎ বন্যার বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। তেমনি নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের পানি বৃদ্ধির বিষয়ে নজর রাখতে এবং প্রয়োজন হলে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে সিলেট, নেত্রকোণা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ও শেরপুর এলাকায় বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যেমন প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে বৃষ্টি উপকারী হয়ে ওঠে, তেমনি অতিরিক্ত বৃষ্টি বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। দেশের তিনটি বিভাগের জন্য এই মুহূর্তে যে পূর্বাভাস এসেছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সচেতনতা ও আগাম প্রস্তুতিই পারে এই ধরনের প্রাকৃতিক ঝুঁকি থেকে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ