
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই কর্মসূচিকে ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সংগঠনটি। শুধু ঢাকাতেই নয়, দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে প্রায় ৯০টি সাংগঠনিক টিম। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের তত্ত্বাবধানে টিমগুলো মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে বহু আগেই।
এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের সবচেয়ে বড় ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে চায়। তারা বলছে, “এটি শুধুই একটি কর্মসূচি নয়, বরং গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ও আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের স্মরণ এবং ভবিষ্যতের ছাত্র রাজনীতির দিকনির্দেশনা নির্ধারণের মঞ্চ।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, এবার তারা সমাবেশকে ভিন্নমাত্রা দিতে চান। এতে থাকবে না কোনো ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড বা শোডাউন। ব্যক্তিগত প্রচারণা বা নেতৃত্বের শোডাউনকে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে অংশ নেওয়া সকল ইউনিটকে সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত আচরণবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ছয় দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে:
সমাবেশে কেউ ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড আনতে পারবে না
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ইউনিটকে থাকতে হবে
কাঁটাবন মোড় থেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহনের চলাচলে সহায়তা করতে হবে
ছাত্রদলের ইউনিটসমূহের পরিবহন কোনো অবস্থাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না
শোডাউন ও মিছিল নিষিদ্ধ
সমাবেশ শেষে নির্ধারিত স্থান পরিষ্কার করে যেতে হবে
এ বিষয়ে সংগঠনের একাধিক নেতা বলেন, “ছাত্রদলের এই সমাবেশ জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের মঞ্চ হবে। এখানে কোনো নেতা নিজস্ব প্রচার চালাতে পারবে না। পুরো আয়োজনটাই হবে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রতীক।”
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সমাবেশে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্রদল নেতাকর্মীদের পরিবার এবং আহতরা অংশ নেবেন। তাদের উপস্থিতিকে ‘আত্মত্যাগের প্রেরণা’ হিসেবে তুলে ধরবে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “১৪২ জন নেতাকর্মীর রক্তে লেখা হয়েছে গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস। সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, তাদের আত্মত্যাগ স্মরণ করেই এই সমাবেশ। কেউ যেন এই আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করার সুযোগ না পায়—সে ব্যাপারে আমরা সজাগ। এই আন্দোলন কোনো একক দলের নয়, এটি দেশের সব ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণির মানুষের ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধের ফল।”
প্রথমে সমাবেশের স্থান নির্ধারিত হয়েছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। তবে একই দিনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র কর্মসূচি থাকায়, ছাত্রদল সেই স্থান ছেড়ে দিয়ে শাহবাগে সমাবেশ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত উদারতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার উদাহরণ হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যাতে বিরোধী পক্ষের কেউ অপপ্রচার করতে না পারে।
সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা ২ আগস্ট শনিবার রাতেই ঢাকায় পৌঁছবেন। ঢাকা আসা নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল আচরণ ও সময়মতো উপস্থিতির ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোগী পরিবহন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সহায়তায় নেতাকর্মীদের অংশ নিতে বলা হয়েছে।
ছাত্রদল শুধু সমাবেশ করেই থেমে থাকছে না। এটি সফল করতে সুপার ফাইভ নামে পরিচিত প্রতিটি ইউনিটের শীর্ষ পাঁচজন নেতার সমন্বয়ে বৈঠক করা হয়েছে একাধিকবার।
গত মঙ্গলবার নয়াপল্টনের ভাসানী ভবনে ঢাকা বিভাগের সব জেলা ও মহানগর ইউনিটের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। একই দিনে সারা দেশের সভাপতি, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক ও সদস্য সচিবদের নিয়ে দুটি পৃথক বৈঠক হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ইউনিটের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা হয়।
এছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও সমাবেশে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সাংগঠনিক টিমগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকাগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক এবং রংপুর টিমের সদস্য সালেহ মোহাম্মদ আদনান বলেন, “ছাত্রদলের ইতিহাসে এই সমাবেশ গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রদের শক্তি, শৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক অবস্থান দেখাতে চাই আমরা। রংপুর থেকে শত শত নেতাকর্মী আগের দিনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।”
ছাত্রদল মনে করছে, এই সমাবেশ হবে শুধু রাজনৈতিক দাবি আদায়ের মঞ্চ নয়, বরং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ।
“এই সমাবেশ থেকে আমরা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতা এবং শিক্ষা অধিকার আদায়ের আহ্বান জানাবো। ছাত্রসমাজকে রাজনীতিতে যুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে পারে তারা,”— বলেন একজন কেন্দ্রীয় নেতা।
ছাত্রদলের ভাষায়, এই সমাবেশ হবে গণ-অভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও একটি গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য শপথ নেওয়ার দিন।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের শাহবাগের ছাত্র সমাবেশ হতে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক বার্তা ও সংগঠনের শক্তি প্রদর্শনের গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
নেতাকর্মীদের ঐক্য, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ এবং নেতৃত্বের পরীক্ষা হিসেবে এই সমাবেশকে দেখা হচ্ছে। একবছর আগে যেসব ছাত্র রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে এবার ছাত্রদল নতুনভাবে রাজপথে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চায়—শৃঙ্খলিত, সুসংগঠিত এবং উদ্দেশ্যপ্রসূতভাবে।
সমাবেশ সফল করতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, রোববার শাহবাগ হবে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনাস্থল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ