ছবি: বাংলাবার্তা
পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে মধুর। প্রেমময় দাম্পত্য জীবন জান্নাতের এক টুকরো। আর মনোমালিন্য, ঝগড়ার দাম্পত্য জীবন জাহান্নামের এক টুকরো। দাম্পত্য জীবন মধুর ও ভালোবাসায় ভরে উঠে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের বোঝাপড়ায়। ইসলাম নফল ইবাদতের চেয়েও স্বামীর আনুগত্যকে প্রাধান্য দিয়েছে।
নফল ইবাদতের চেয়ে স্বামীর আনুগত্য অগ্রগণ্য
স্বামীর আনুগত্যকে নফল ইবাদতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। কাজেই উক্ত নারী রোযা রেখে যে সওয়াব পেত, স্বামীর আনুগত্যের বিনিময়ে তার চেয়েও বেশি সওয়াব পাবে। নারী মনে করবে না যে, আমি রোযার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। কারণ তাকে ভাবতে হবে, রোযা কিসের জন্য রাখা হয়? রোযা তো এজন্য রাখা হয় যে, সওয়াব পাওয়া যাবে এবং মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হবে। আর আল্লাহ বলেছেন, আমি তোমার প্রতি ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না, যতক্ষণ না তোমার স্বামী তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে। কাজেই যে সওয়াব তুমি রোযা রেখে লাভ করবে, স্বামীর আনুগত্যের ফলে রোযা না রেখেও সেই সওয়াব পাবে-ইনশাআল্লাহ।
সংসারের কাজকর্মের বিনিময়ে সওয়াব ও প্রতিদান
আমার অনেকেই মনে করি যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার এই যে সম্পর্ক, এটি এক ধরনের দুনিয়াবি বিষয়-আশয়। এটি শুধু যৌনকামনা চরিতার্থের বিষয়। কিন্তু ব্যাপারটি কক্ষনো এমন নয়। বরং এটি দীনি ব্যাপারও বটে। কেননা কোনো নারী যদি এই নিয়ত করে যে, আল্লাহ পাক বিয়ে-বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে আমার ওপর ফরজ করেছেন। আমার এই বৈবাহিক সম্পর্কের উদ্দেশ্য স্বামীকে সন্তুষ্ট করা আর এর মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, তাহলে এই দাম্পত্যজীবনটা পুরোপুরিই সওয়াবের আমলে পরিণত হয়ে যায়। মহিলারা ঘরের যেসব কাজ-কর্ম আঞ্জাম দেয়, তাতে যদি স্বামীর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যত কাজ করছে, আল্লাহর নিকট সবই ইবাদত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। খাবার রান্না করা বলুন, ঘরের তত্ত্বাবধান বলুন, সন্তানদের লালন-পালন বলুন, স্বামীর সেবা-যত্ন বলুন, স্বামীর সঙ্গে মনোরঞ্জনমূলক কথাবার্তা বলুন, সব কাজেরই বিনিময়ে সওয়াব লিপিবদ্ধ হয়। শর্ত হলো, নিয়ত ঠিক হতে হবে।
যৌনকামনা চরিতার্থের বিনিময়েও সওয়াব!
এই বিষয়বস্তুর ওপর সুস্পষ্ট হাদিস বর্ণিত আছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের জন্য আল্লাহ পাক সওয়াব দান করে থাকেন। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এমন তো মানুষ যৌনকামনা চরিতার্থের জন্য করে থাকে, এর আবার সওয়াব কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি এই যৌনকামনাকে অবৈধ পন্থায় চরিতার্থ করত, তাহলে গোনাহ হতো কি না বলো? সাহাবায়ে কেরাম উত্তর দিলেন, হে আল্লাহর রাসুল, তা তো হতো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা অবৈধ পন্থা পরিহার করে বৈধ পন্থায় যৌনকামনা চরিতার্থ করে, তারা আমার কারণে এবং আমার আদেশের ফলেই এমন করে। তাই এর জন্য তারা সওয়াব পাবে। (মুসনাদে আহমদ : ৫/৬৭)
কাযা রোযায় স্বামীর সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখা
তিরমিযি শরিফে একটি হাদিস আছে, হযরত আয়েশা রা. বর্ণনা করেন, রমজান মাসে স্বভাবগত অপারগতার কারণে আমার যে ক’টি রোযা কাযা হয়ে যেত, সেই রোযাগুলো আমি পরবর্তী শাবান মাসে রাখতাম। অর্থাৎ প্রায় এগারো মাস পর। এমনটি আমি এজন্য করতাম যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন। সেজন্য আমিও যদি এই সময়টিতে রোযা রাখতাম আর রাসুলও রোযা রাখতেন, তাহলে আমার রোযা রাখার দ্বারা তাঁর কোনো অসুবিধা বা কষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকত না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযাদার নয় কিন্তু আমি রোযাদার, এই অবস্থার চেয়ে এই পন্থাটিই উত্তম ছিল। অথচ সেটি নফল রোযাও ছিল না। বরং রমজানের কাযা রোযা ছিল। আর কাযা রোযা সম্পর্কে আদেশ হলো, এই রোযা যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে নেওয়া উচিত। কিন্তু হযরত আয়েশা রা. শুধু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কষ্টের কথা বিবেচনা করে কাযা রোযা রাখাকে শাবান পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং : ১৯৩৩)
মহান আল্লাহ প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর করুন। আমিন।
বাংলাবার্তা/জেডএইচ