
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামে সৌন্দর্যের চর্চা প্রশংসনীয় হলেও কিছু রূপচর্চা রয়েছে, যেগুলো শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। আধুনিক যুগে শরীরকে অলঙ্কৃত করতে যে বিষয়গুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার একটি হলো ট্যাটু বা উল্কি আঁকা। কিন্তু ইসলামি শরিয়তের আলোকে এই রীতিকে ‘গর্হিত ও হারাম’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। শরীরের সৌন্দর্য বাড়াতে বা ফ্যাশনের অংশ হিসেবে ট্যাটু আঁকা প্রচলিত হলেও, পবিত্র হাদিসে একে নিয়ে রয়েছে কঠোর সতর্কবার্তা এবং অভিসম্পাত।
হাদিসে কী বলা হয়েছে?
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি সহিহ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উল্কি অঙ্কনকারিণী ও উল্কি আঁকিয়ে নেওয়াকারিণীকে অভিশপ্ত বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সেই নারীর ওপর, যে উল্কি আঁকে এবং যার জন্য উল্কি আঁকা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৪০৮)
আরেকটি হাদিসে আবু জুহাইফা (রাঃ) বলেন, “নবী করিম (সাঃ) এমন চার শ্রেণির মানুষের প্রতি লানত করেছেন—যারা সুদ দেয়, সুদ খায়, উল্কি আঁকে এবং উল্কি আঁকায়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৪৭)
এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট যে, ট্যাটু আঁকা বা আঁকানো—উভয়টিই ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি শুধু ফিকহি দিক থেকে ‘নাজায়েজ’ বা ‘হারাম’ই নয়, বরং এটি ‘কবিরা গুনাহ’ বা মহাপাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
শরিয়ত কেন ট্যাটু নিষিদ্ধ করেছে?
ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃতি করা হারাম। ট্যাটু আঁকার ক্ষেত্রে একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক চামড়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে ফুটিয়ে তোলা, রঙ ঢোকানো এবং স্থায়ীভাবে চেহারা বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের গঠনে পরিবর্তন আনা হয়, যা সরাসরি সৃষ্টিগত গঠন বিকৃতির শামিল। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, শয়তান মানুষের মধ্যে ওয়াসওয়াসা ছড়িয়ে বলবে—“তুমি আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করে দাও।” (সূরা নিসা: ১১৯)
ট্যাটু নিয়ে ইসলামের কঠোর অবস্থান এই শিক্ষার প্রতিফলন—মানুষ যেন তার শরীরকে আল্লাহর নির্ধারিত গঠনে ধরে রাখে এবং কৃত্রিম ও স্থায়ী পরিবর্তন না আনে।
ট্যাটু ও অজু-গোসলের সমস্যা
অনেক সময় ট্যাটু আঁকার ফলে এমন একটি আবরণ তৈরি হয়, যা ত্বকের উপর পানি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করে। এটি অজু ও গোসলের সময় ফরজ আদায়কে বাধাগ্রস্ত করে, যার কারণে ইবাদত শুদ্ধ হয় না। যদিও কিছু ট্যাটু স্কিনের নিচে সুঁচের মাধ্যমে রং ঢুকিয়ে করা হয় (যা দৃশ্যত পানি ঠেকায় না), তথাপি বিষয়টি রূপচর্চার নামে শরীর বিকৃত করার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তা হারামই থাকে।
তাওবা ও করণীয়
যে কেউ যদি পূর্বে ট্যাটু করে থাকেন, তবে করণীয় হলো—তা সম্ভব হলে অপসারণ করে ফেলতে হবে। যদি অপসারণে শারীরিক ক্ষতি বা জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তাওবা করলেই যথেষ্ট। আল্লাহর দরজা সব সময় খোলা। আল্লাহতায়ালা বলেন—
“হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ তো সব গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার: ৫৩)
তাই ট্যাটু করে থাকলে, গোনাহ বুঝে তা মুছে ফেলার চেষ্টা এবং পরিপূর্ণ অনুতাপে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াই মুসলমানের একমাত্র করণীয়।
সৌন্দর্য নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলাম সৌন্দর্যপ্রিয়তা সমর্থন করে। রাসুল (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।” তবে সেই সৌন্দর্য হতে হবে স্বাভাবিক, স্বচ্ছ ও শরিয়তসম্মত। ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে সুগন্ধি ব্যবহার, চুল-দাড়ি পরিপাটি রাখা, পোশাকে রুচিশীলতা ইত্যাদি বিষয়ে। কিন্তু ভ্রু উঠানো, দাঁত কেটে সৌন্দর্যবৃদ্ধি, স্থায়ীভাবে চেহারার গঠন বদলানো বা ট্যাটু আঁকা নিষিদ্ধ।
ইসলামী ফিকহের রেফারেন্স
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৪৭, ৫৪০৮
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১২৪
শারহুন নাবাবি আলা সহিহ মুসলিম, ১৪/১০৬
উমদাতুল কারি, ১১/২০৪
রাদ্দুল মুহতার, ৬/৩৭৩
শরীরে ট্যাটু আঁকা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ। যারা পূর্বে ট্যাটু করেছেন, তাদের উচিত তা অপসারণের চেষ্টা এবং আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। ইসলাম চায় পবিত্রতা, স্বাভাবিকতা এবং শরীরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ