
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই নানা বিনোদনমূলক কনটেন্ট দর্শকদের উপহার দেন নির্মাতারা। বড় পর্দা থেকে শুরু করে ছোট পর্দা, ইউটিউব থেকে ওটিটি—সবখানেই চলে নতুন কনটেন্টের দাপট। এবারের ঈদেও ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের আগে থেকেই দর্শকদের মুখে মুখে ছিল শাকিব খান ও সাবিলা নূর অভিনীত সিনেমা ‘তাণ্ডব’-এর গান ‘লিচুর বাগানে’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এই গানটি নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় ইউটিউবে প্রকাশ পায় ফারহান আহমেদ জোভানের অভিনীত নাটক ‘আশিকি’, আর তখনই পাল্টে যায় দৃশ্যপট।
মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ‘আশিকি’ ইউটিউবে দর্শকপ্রিয়তায় শীর্ষে উঠে এসেছে। নাটকটি যখন ঈদের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ ৮ জুন রাতে সিএমভি’র ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়, তখন থেকেই দর্শকদের মাঝে এর প্রতিক্রিয়া ছিল ব্যাপক। এ পর্যন্ত নাটকটি ৬৬ লাখের বেশি ভিউ অর্জন করেছে। অন্যদিকে, বহুল আলোচিত ‘লিচুর বাগানে’ গানটি এখনো ১৭ লাখ ভিউ পার করতে পারেনি। এ বিপরীতমুখী সাফল্য এখন ঈদের বিনোদন জগতের আলোচনার কেন্দ্রে। অনেকে বলছেন, জনপ্রিয়তায় ‘আশিকি’ নাটক বড় পর্দার গানের চেয়েও এগিয়ে গেছে।
‘আশিকি’ মূলত একটি হৃদয়ছোঁয়া প্রেমের নাটক হলেও, এতে রয়েছে সমাজ ও বাস্তব জীবনের জটিলতার ছোঁয়া। নাটকে জোভান অভিনয় করেছেন আশিক নামের এক তরুণের চরিত্রে। তিনি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, যার বাবা স্বপ্ন দেখেন ছেলেকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যেই আশিক ঢাকায় এসে কলেজে ভর্তি হয়। তবে আশিকের আরও একটি স্বপ্ন রয়েছে—সেটি হলো গায়ক হওয়া। সংগীতের প্রতি তার রয়েছে গভীর ভালোবাসা।
অন্যদিকে, নাটকে জেস চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজনীন নীহা। তিনি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে এবং একই কলেজে পড়েন। দুই ভিন্ন সামাজিক শ্রেণির তরুণ-তরুণীর পরিচয় থেকে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। কিন্তু সব কিছু সহজভাবে এগোয় না। ভালোবাসার বাঁকে বাঁকে ঘটে নানা জটিলতা, ভুল বোঝাবুঝি, পারিবারিক চাপ এবং সমাজের কঠোর বাস্তবতা।
জোভান ও নীহার রসায়ন দর্শকদের বেশ নাড়া দিয়েছে। বিশেষ করে এক দৃশ্যে আশিক যখন গিটার হাতে গান গায়, সেই মুহূর্তটি অনেক দর্শকের চোখে জল এনেছে। বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকা রোমান্টিক মুহূর্তগুলো নাটকটিকে করেছে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও হৃদয়গ্রাহী।
‘আশিকি’র নির্মাণশৈলীর পেছনে যে একটি পরিশ্রমী ও দক্ষ টিম কাজ করেছে, তা স্পষ্ট নাটকের প্রতিটি দৃশ্যে। চিত্রনাট্য লিখেছেন পারভেজ ইমাম, আর পরিচালনায় ছিলেন ইমরোজ শাওন। সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন খায়ের খন্দকার, যিনি ক্যামেরার মাধ্যমে গল্পের আবেগকে পর্দায় জীবন্ত করে তুলেছেন।
নাটকটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ছিল সিএমভি, যারা নিয়মিতভাবে ইউটিউব ভিত্তিক নাটক এবং গান প্রযোজনা করে থাকে। নাটকে আরও অভিনয় করেছেন মাহমুদুল ইসলাম মিঠু, মিলি বাশার ও অদিতি জামান স্নেহা। এছাড়া কণ্ঠশিল্পী কনা একটি দৃশ্যে ক্যামিও চরিত্রে উপস্থিত হয়ে নাটকে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছেন।
নাটকটির দুটি গান ইতোমধ্যে আলাদাভাবে ভাইরাল হয়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গানটি হলো ‘দহন’, যেটি লিখেছেন এম এ আলম শুভ, সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন সজীব দাস। এই গানটির একটি দৃশ্য ঈদের আগেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। অন্য গানটি হলো ‘যদি মনটা চুরি করি’, যেটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কনা ও সজীব দাস। এই গানটির কথা লিখেছেন সালাহউদ্দিন সাগর। দুইটি গানই নাটকের আবেগকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে এবং দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।
নাটকের শুরুতে একটি দৃশ্য ঘিরে সামান্য বিতর্ক তৈরি হলেও পুরো নাটকটি দেখার পর সমালোচনার জায়গায় চলে আসে প্রশংসা। নাটকের নিচে ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ৮ হাজারের বেশি মন্তব্য জমা পড়েছে, যেখানে অধিকাংশই ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। দর্শকরা বিশেষভাবে প্রশংসা করেছেন জোভানের পরিপক্ব অভিনয়, গানের ব্যবহার, নির্মাণশৈলী এবং আবেগঘন কাহিনির।
বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির দর্শকদের কাছে নাটকটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে বলেই মনে করছেন কনটেন্ট বিশ্লেষকরা। অনেকেই বলছেন, ঈদের মৌসুমে যখন বড় পর্দার গ্ল্যামারই মূল আকর্ষণ থাকে, তখন একটি ওয়েবভিত্তিক নাটক এমনভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা প্রমাণ করে যে, ভালো কনটেন্ট সবসময়ই দর্শকদের মন জয় করে নিতে পারে।
‘আশিকি’র অভাবনীয় জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেছে, স্রেফ নামী মুখ বা অতিরঞ্জিত প্রচারণাই নয়, বরং বাস্তবতা, আবেগ, শিল্পমান এবং ভালো গল্পই দর্শকদের বেশি আকর্ষণ করে। এই সাফল্য নতুন প্রজন্মের নির্মাতাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
ঈদুল আজহার ২০২৫ সালের কনটেন্ট প্রতিযোগিতায় যেখানে একদিকে ছিল শাকিব খান ও সাবিলা নূরের বহুল আলোচিত গান ‘লিচুর বাগানে’, অন্যদিকে ছিল জোভানের অভিনীত ‘আশিকি’ নাটক। শেষ পর্যন্ত নাটকই প্রমাণ করেছে—দর্শকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হলে প্রয়োজন গল্প, শিল্প, ও সত্যিকারের আবেগ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ