
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা, যা দায়িত্বে রয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী শিক্ষকদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়। বর্তমানে এই নিবন্ধন পরীক্ষা তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয় — প্রিলিমিনারি (প্রাথমিক) পরীক্ষা, লিখিত পরীক্ষা এবং মৌখিক বা ভাইভার পরীক্ষা। এই পুরো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘ সময়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তিন ধাপের পরীক্ষা
এনটিআরসিএর মাধ্যমে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা চালানো হলেও দীর্ঘ সময় লাগে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। এতে অনেক প্রার্থী নিবন্ধন সনদ অর্জনের পরও সময়ের সাপেক্ষে বয়সসীমা পার হয়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ হারান। ফলে বছরের পর বছর অনেক শিক্ষার্থী নিয়োগবঞ্চিত থাকেন। একই সঙ্গে দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও নানা সময় শিক্ষক সংকটে পড়ছে, যা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করছে।
এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এনটিআরসিএ এখন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রক্রিয়া সরল ও সময়সীমা কমিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরীক্ষার ধাপ সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা এই প্রেক্ষাপটে উঠে এসেছে। বিশেষ করে, প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের বাছাই করার প্রস্তাব তোলা হয়েছে।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রথম ধাপ হিসেবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হয়, এরপর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই দুটি পরীক্ষার মধ্যে একটি বাদ দিলে পুরো প্রক্রিয়ার সময় অনেকটাই কমে আসবে। প্রাথমিক আলোচনা অনুযায়ী, প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি বাদ দেওয়া হতে পারে এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা রাখার কথা ভাবা হচ্ছে।
এ বিষয়ে এনটিআরসিএর সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক বলেছেন, “বর্তমানে নিবন্ধন পরীক্ষা তিন ধাপে হয়। আমরা একটি ধাপ কমিয়ে আনতে চাই। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিগত অনুমোদনও পেয়েছি। তবে জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের মতামত পাওয়ার পরই আমরা আমাদের বোর্ড সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
তিনি আরও জানান, “প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাদ দেওয়া হবে কি না, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে প্রিলিমিনারি অংশ বাদ দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।”
গত ২৫ মে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তনসহ অন্যান্য বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সভাকক্ষে, যেখানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। বৈঠকে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ধাপ কমিয়ে আনার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি প্রদান করা হয়।
এনটিআরসিএর পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তনের এই উদ্যোগ দেশের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে দ্রুততর এবং ফলপ্রসূ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতে শিক্ষক নিয়োগে নিয়মিত সমস্যা হচ্ছে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে। অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার কারণে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকট বেড়ে যাচ্ছে, যা শিক্ষার মানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার আয়োজন থাকলেও দীর্ঘ প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ধারাবাহিকতার কারণে অনেকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়। এই সমস্যার সমাধানে প্রিলিমিনারি পরীক্ষাটি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব এনটিআরসিএ তোলার মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
শিক্ষক নিয়োগে দ্রুততা ও সহজতা আনার জন্য এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেক শিক্ষা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, তিন ধাপের পরীক্ষা থেকে একটি বাদ দিলে আবেদনকারীদের ওপর চাপ কমবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত শিক্ষক পাবে, যা শিক্ষা সেক্টরের উন্নয়নে সহায়ক হবে।
তবে কিছু শিক্ষাবিদ ও পরীক্ষার্থীর মধ্যে কিছু প্রশ্ন উঠেছে, লেখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে প্রিলিমিনারির বিকল্প হিসেবে শিক্ষক যোগ্যতা যথাযথভাবে যাচাই করা কতটা সম্ভব হবে। এজন্য নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষার কাঠামো ও মান নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জানান, জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের মতামত পেলে তারা পরবর্তী বোর্ড সভায় এই প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে এবং শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। যদি এই পরিবর্তন প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়, তবে আগামী শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাদ দিয়ে শুধু লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এটি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে সহজতর ও দ্রুততর করার একটি উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের শিক্ষা খাতের বর্তমান সংকট দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ধাপ কমিয়ে আনার এই উদ্যোগ দেশের বেসরকারি শিক্ষা খাতের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে। দীর্ঘসময় অপেক্ষার ফলে প্রার্থীদের বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার সমস্যা কমবে এবং দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংকট নিরসন সম্ভব হবে। তবে নতুন পরীক্ষার কাঠামো ও মান নিয়ন্ত্রণের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে, যাতে শিক্ষার গুণগত মানে কোন প্রভাব না পড়ে।
শিক্ষক নিবন্ধনে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাদ দেওয়ার এই সম্ভাব্য পরিবর্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে স্বাগত এবং আশাবাদী, যা আগামী দিনে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ