
ছবি: সংগৃহীত
দেশের নতুন প্রজন্মের তরুণ ভোটারদের মধ্যে ভোট প্রদানের ব্যাপারে যে বিশাল উচ্ছ্বাস এবং আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১১ জুন বুধবার লন্ডনের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের মূল হল কক্ষে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এই কথাগুলো বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের তরুণদের স্বপ্ন, আশা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্মান জানান। তিনি বলেন, “আমরা পুরনো বাংলাদেশকে বিদায় জানাতে চাই এবং তরুণ প্রজন্মের উদ্যম ও আকাঙ্ক্ষার ওপর পুরো দেশকে গড়ে তোলার আশ্বাস দিচ্ছি।” তার মতে, ভোটের প্রতি তরুণদের আকর্ষণ নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারা এখনও তাদের প্রথম ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। তাই নতুন নির্বাচন হবে তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মঞ্চ।” তিনি জানান, আগামী নির্বাচন শুধুমাত্র একটি সাধারণ সরকার নির্বাচনের প্রচলিত ভোটগ্রহণ হবে না, বরং এটি হবে নতুন ও আধুনিক বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভোট। এই ভাবনা ও সংকল্পই তাদের প্রধান প্রতিশ্রুতি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা তরুণ ভোটারদের এই উচ্ছ্বাসকে কাজে লাগিয়ে দেশের রাজনীতিতে একটি সুষ্ঠু ও গঠনমূলক পরিবর্তন আনতে চাই। এটি হবে দেশের জন্য একটি নতুন সূচনা।”
অধ্যাপক ইউনূস তার ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও, যা গঠিত হয়েছে সর্বশেষ।’
তিনি বলেন, “এই কমিশনগুলোর সুপারিশে সব রাজনৈতিক দল সম্মত হবে এবং একটি জাতীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে, যা আমরা ‘জুলাই সনদ’ নামে ডাকি। আমরা জুলাই মাসের জন্য অপেক্ষা করছি, যখন এই সনদ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং তার ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব প্রসঙ্গে জানান, সরকার প্রধানত তিনটি দায়িত্ব পায়—সংস্কার বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশ কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি ছিল। তখন বিশ্বব্যাপী সংকট চলছিল এবং বাংলাদেশও আলাদা ধরনের সংকটে অবস্থান করছিল।”
অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত বর্ণনায় অধ্যাপক বলেন, “আমরা অর্থনীতির শূন্যপর্যায়েও ছিলাম না, বরং ঋণাত্মক পর্যায়ে অবস্থান করছিলাম এবং বিশাল ঋণ পরিশোধের চাপ আমাদের সামনে ছিল।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং তার পরবর্তী পুনরুদ্ধারের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার সময়ের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়, বিতাড়িত সরকারের সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাচার হয়েছে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল শূন্য এবং ব্যাংকিং খাত প্রায় ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় ছিল।”
তারপরেই তিনি দেশের অর্থনীতিকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান স্মরণ করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে আমাদের পেমেন্ট অব ব্যালেন্স পুরোপুরি পাল্টে গেছে।”
এতে বোঝা যায়, প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের অর্থনীতিতে যেভাবে অবদান রেখে চলেছেন, তা দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “বিশ্বের সকল দেশ আমাদের সরকারের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়েছে এবং এজন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ