ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে মাঠে প্রথমবারের মতো খেললেন কানাডা প্রবাসী তরুণ মিডফিল্ডার শমিত সোম। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। যদিও ফলাফলের দিক থেকে দিনটি প্রত্যাশামতো কাটেনি লাল-সবুজদের জন্য, তবুও মাঠে দলের লড়াকু পারফরম্যান্স এবং তরুণ ফুটবলারদের সাহসী উপস্থিতি দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
ম্যাচটিতে শুরু থেকেই ছন্দে ছিলেন শমিত সোম। মিডফিল্ডে তার বল কন্ট্রোল, পাসিং, দৃষ্টি এবং গোলমুখে বল বাড়িয়ে দেওয়ার মুন্সিয়ানা নজর কাড়ে। ম্যাচে অন্তত ছয়টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল একদম নিশ্চিত সম্ভাবনার। তার সৃষ্ট অন্যতম সুযোগ থেকে ৬৭ মিনিটে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন রাকিব হোসেন। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের দাপট থাকলেও সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে ২-১ গোলের হারে শেষ হয় ম্যাচটি।
জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামার অনুভূতি সবসময়ই বিশেষ। আর সেই অভিষেক যদি হয় দেশের হয়ে, তাহলে তা আজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকে। ম্যাচের পরদিন বুধবার (১১ জুন) নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে একটি আবেগঘন পোস্ট করেন শমিত। সেখানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গর্ব, ম্যাচের অভিজ্ঞতা এবং সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
শমিত সোম তার পোস্টে লেখেন: “ধন্যবাদ বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা এবং খেলার এক অসাধারণ অনুভূতি হয়েছে। ম্যাচে আমরা যা চেয়েছি, তা করতে পারিনি। তাই একটু হতাশ। তবে এই দলের অংশ হতে পেরে আমি দারুণ গর্বিত। আমার সতীর্থ, কোচিং স্টাফ, বাফুফের সব সদস্য এবং অবশ্যই ভক্তদের ধন্যবাদ আমাকে এভাবে গ্রহণ করার জন্য। সবে তো শুরু হলো।”
এই পোস্টে স্পষ্ট যে, তিনি শুধু খেলেই দায়িত্ব শেষ করেননি—ভবিষ্যতের জন্যও প্রস্তুত তিনি। নিজের অভিষেক ম্যাচে অর্জন এবং ঘাটতিকে পর্যালোচনা করে নতুনভাবে সামনের পথচলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ পুরো ম্যাচে দারুণ লড়াই করে। শুরুর দিকে দুই গোল হজম করে পিছিয়ে পড়লেও হাল ছাড়েনি জামাল ভূঁইয়ারা। দ্বিতীয়ার্ধে বারবার আক্রমণে উঠে আসে বাংলাদেশ, যার বেশিরভাগই শুরু হচ্ছিল শমিতের পা থেকে। তার গতিময় খেলা, বল ডিস্ট্রিবিউশন এবং মাঝমাঠে আধিপত্য অনেকটা নতুন দম এনে দেয় বাংলাদেশ দলকে। অভিষেক ম্যাচ হলেও খেলার ধরনে ছিল না কোনো নার্ভাসনেস। বরং লাগছিল অভিজ্ঞ কোন মিডফিল্ডারের মতোই আত্মবিশ্বাসী।
ফলাফলে তেমন প্রভাব না থাকলেও, মাঠে শমিতের এমন দৃঢ় উপস্থিতি বাংলাদেশের মিডফিল্ড সংকটে খানিকটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও ম্যাচশেষে তার পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে একটি প্রীতি ম্যাচে মাঠে বসেই দলের পারফরম্যান্স দেখেছিলেন শমিত সোম। তবে সে ম্যাচে তাকে বিশ্রামে রেখেছিলেন কোচ, মূলত তাকে নিয়ে ছিল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাই পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাকে মূল একাদশে রেখে আস্থার প্রতিদান পেয়েছেন কোচ।
উল্লেখ্য, শমিত সোম বেড়ে উঠেছেন কানাডায়। ফুটবলের সঙ্গে তার সংযোগটা সেই ছোটবেলা থেকেই। বিদেশের ঘাসে গড়া মাঠে গড়া প্রতিভাকে বাংলাদেশ জাতীয় দলে যুক্ত করা সহজ ছিল না, তবে বাফুফের প্রচেষ্টায় এবং কোচের তীক্ষ্ণ নজরে শেষ পর্যন্ত সুযোগ পান তিনি।
সিঙ্গাপুর ম্যাচের পর বাংলাদেশের সামনে রয়েছে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ—দুই লেগে হংকংয়ের মুখোমুখি হবে তারা। আগামী ৯ অক্টোবর ঢাকায় প্রথম ম্যাচ এবং ১৪ অক্টোবর ফিরতি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে হংকংয়ের মাঠে। এই দুটি ম্যাচে শমিত সোমের পারফরম্যান্স হতে পারে অনেক বড় নিয়ামক। কারণ প্রতিপক্ষ হংকং অনেক বেশি গুছানো ও শক্তিশালী দল, যাদের রক্ষণ ভাঙতে হলে চাই কৌশলী এবং দ্রুতগতির মিডফিল্ড প্লে।
শুধু মিডফিল্ড নয়, দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মানসিকতাও শমিতের মধ্যে রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সেই সঙ্গে তার বিদেশে বড় হওয়া এবং আধুনিক ফুটবলের পাঠ তাকে বাংলাদেশের মাঝমাঠে ‘প্লে-মেকার’ হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শমিত সোমের প্রশংসায় ভাসছে ভক্তরা। কেউ বলছেন, “এই ছেলেটা আমাদের মিডফিল্ডের ভবিষ্যৎ।” আবার কেউ লিখছেন, “অনেকদিন পর এমন চোখধাঁধানো পাসিং ও ভিশন দেখলাম বাংলাদেশের মিডফিল্ডে।” অনেকেই আশা করছেন, শমিত নিয়মিত দলে থাকলে বাংলাদেশ সামনের দিনগুলোতে আরও আক্রমণাত্মক এবং ট্যাকটিক্যাল ফুটবল খেলতে পারবে।
ফুটবল মানেই শুধুই স্কোরলাইন নয়, বরং ভেতরে লুকিয়ে থাকা চেষ্টার গল্প, আত্মত্যাগের ছাপ, এবং নতুন কারো উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার প্রতীক্ষা। শমিত সোমের অভিষেক হয়তো জয় দিয়ে শুরু হয়নি, কিন্তু তার পারফরম্যান্স, মানসিকতা ও মাঠে প্রভাব দেখিয়ে দিয়েছেন—বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন সূর্যোদয় খুব একটা দূরে নয়।
শমিতের নিজের কথায়, “সবে তো শুরু হলো।” আর শুরুটা যদি এমন হয়, তবে পরবর্তী অধ্যায়গুলো নিশ্চয়ই আরও উজ্জ্বল হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



