
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল ফিতরের ছুটির মাঝে দেশে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের স্বার্থে সীমিত পরিসরে কিছু ব্যাংকের শাখা বৃহস্পতিবার (১২ জুন) খুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দেশের প্রধান বাণিজ্যিক জেলা ও শিল্পাঞ্চলগুলোর কিছু নির্বাচিত ব্যাংক অফিস সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে, যেখানে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন (ডিওএস) সম্প্রতি এক অফিসিয়াল সার্কুলারে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে এই নির্দেশনা পাঠায়। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদের সরকারি ছুটির মধ্যেও দেশের ওষুধ শিল্প, আমদানি ও রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ এবং বৈদেশিক লেনদেনের সুবিধার্থে সীমিত পরিসরে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখাগুলো কার্যক্রম চালু রাখবে।
এই সিদ্ধান্ত ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারার অধীনে জনস্বার্থে গ্রহণ করা হয়েছে। ওই ধারায় সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ বা নির্দেশনা জারি করার অধিকার রাখে, যা এই ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোতে অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখাগুলো সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। বিশেষ করে, যেখানে দেশের প্রধান শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র অবস্থিত, সেখানে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখা জরুরি বিবেচনা করা হয়েছে।
এই শাখাগুলোতে শুধু প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনই করা যাবে, যা মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ব্যাংক অফিস খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, তবে লেনদেনের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এই নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকরা জরুরি লেনদেন করতে পারবেন।
এছাড়া, ছুটির দিনেও দায়িত্ব পালনকারী ব্যাংক কর্মকর্তারা সরকারি বিধিমতো অতিরিক্ত ভাতা এবং সুবিধাদি পাবেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে। এর ফলে তারা উৎসবের সময়ে সেবা প্রদানে উৎসাহিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে সরকারি ছুটি থাকলেও অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরের কিছু অংশ সচল রাখা দেশীয় অর্থনীতির সুষ্ঠু গতিশীলতার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বিশেষ করে বৈদেশিক বাণিজ্য ও আমদানিকারক-রপ্তানিকারকদের আর্থিক লেনদেন বন্ধ হলে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এই কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছুটির দিনেও সীমিত পরিসরে ব্যাংকের কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় জনস্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিধান রয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োগ করা হয়। এই ধারা অনুসারে সরকারি ছুটির মাঝেও জরুরি সেবা চালুর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণে, বিশেষ করে আমদানি ও রফতানি খাতের লেনদেন নির্বিঘ্ন রাখতে ব্যাংক শাখাগুলোকে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেন করতে পারবে।”
ব্যাংক শাখাগুলো খোলা থাকলেও গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে গিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, বিশেষ করে করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।
ঈদের ছুটির মধ্যেও সীমিতভাবে ব্যাংকিং সেবা চালু রাখার এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিল্প ও বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত না করে দ্রুত আর্থিক লেনদেন সম্পাদনের সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত পুঁজি জোগাড় করতে পারবেন এবং আমদানিকারক-রপ্তানিকারকদের আন্তর্জাতিক লেনদেনে কোন বিঘ্ন ঘটবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগ দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও আর্থিক সেবায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী দিনেও এরকম প্রয়োজনীয় সময়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি পেলে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো সুসংহত ও জোরদার হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ঈদের ছুটির মধ্যে সীমিত সময়ের জন্য হলেও ব্যাংকের কিছু শাখা খোলা থাকার সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ও সচলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, বিশেষ করে আমদানি ও রফতানি খাতে। এটি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ