
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রাক-মৌসুমি বৈরী আবহাওয়ার দাপট দেখা যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১২ জুন) সকাল ৬টায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রকাশিত সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় আজও বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণও। তবে রাজধানী ঢাকায় দিনের শুরুতে আকাশ মেঘলা থাকলেও তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই, বরং আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে মেঘমালা এবং আর্দ্রতা বহনকারী বায়ুপ্রবাহ। পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি মাত্রার ভারি বর্ষণ, যা সড়কপথে জনদুর্ভোগ বাড়াতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে কিছু এলাকায় হালকা ঝোড়ো হাওয়া অনুভূত হতে পারে। ঢাকার আকাশ দিনের বেশির ভাগ সময় আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা থাকবে। যদিও সরাসরি বৃষ্টির সম্ভাবনা কম, তবে মেঘের আনাগোনা এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় গরমের অস্বস্তি থেকে মুক্তি মিলবে না।
তবে আশার খবর হলো—দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমে আসতে পারে। আজ ভোর ৬টায় ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৭ শতাংশ, যা রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও মৃদু তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে এই মৃদু তাপপ্রবাহ, যা রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশেও বিস্তার লাভ করেছে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, এসব এলাকায় তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হতে পারে। তবে বাতাসে উচ্চ আর্দ্রতার কারণে গরমের অনুভূতি বেশি থাকবে।
বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। যদিও দক্ষিণাঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় মৌসুমি বায়ুর আংশিক প্রভাব দেখা যাচ্ছে, কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে এর পরিপূর্ণ বিস্তার এখনো ঘটেনি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের আকাশে ঢুকতে আরও কয়েকদিন সময় লাগতে পারে। তবে বর্ষা প্রবেশের এই আগাম ধাক্কায় দেশের অনেক এলাকায় আকাশ মেঘলা থাকছে এবং বৃষ্টিপাত হচ্ছে বিক্ষিপ্তভাবে।
গরমের তীব্রতা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বৃষ্টির জন্য অপেক্ষায় থাকলেও হঠাৎ বৃষ্টি শহরের জলাবদ্ধতা এবং যাতায়াতে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতার পুরনো সমস্যাগুলো আবারও সামনে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
সব মিলিয়ে দেশের আবহাওয়া আজ একটি দ্বৈত রূপ ধারণ করতে পারে—একদিকে শুষ্ক ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ঘামঝরা অস্বস্তি, অন্যদিকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির ঝাপটা। আবহাওয়া অধিদপ্তর এ অবস্থায় জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ছাতা এবং হালকা বৃষ্টির উপযুক্ত পোশাক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে খোলা মাঠে কাজ করেন বা দীর্ঘ সময় রাস্তায় চলাফেরা করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বজ্রপাতজনিত ঝুঁকি মাথায় রেখে নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ