
ছবি: সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরের আকাশে যখন সূর্য ঝলমল করছিল, তখন বাংলাদেশের আর্চারি অঙ্গনে উঠেছিল আরেকটি আলো—আব্দুর রহমান আলিফের সোনালি সাফল্যের আলো। ২০২৫ সালের এশিয়া কাপ আর্চারিতে ইতিহাস গড়ে পুরুষদের রিকার্ভ এককে স্বর্ণ পদক জিতেছেন এই তরুণ তুর্কি। ফাইনালে জাপানের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ মিয়াতা গাকুতোকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে দেশের জন্য অনন্য এক গৌরব বয়ে এনেছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরের জমকালো আয়োজনের ফাইনালে মুখোমুখি হন আলিফ ও মিয়াতা। শুরুটা হয়েছিল বেশ ভালোই। প্রথম সেটে মিয়াতা স্কোর করেন ২৭ পয়েন্ট, কিন্তু আলিফ এক পয়েন্ট বেশি নিয়ে এগিয়ে যান (২৮)। দ্বিতীয় সেটে দুইজনের লড়াই আরও হাড্ডাহাড্ডি হয়। আলিফ করেন ২৯, মিয়াতা ২৮—ফলে ব্যবধান বেড়ে যায়।
এই অবস্থায় পরের দুই সেটের যেকোনো একটি জিতলেই স্বর্ণ নিশ্চিত হতো আলিফের। কিন্তু এখানেই জমে ওঠে লড়াই। তৃতীয় সেটে আলিফ করেন ২৭, কিন্তু মিয়াতা তুলে আনেন ২৮। চতুর্থ সেটেও মিয়াতা নিজেকে ফিরে পান—আলিফের ২৬ পয়েন্টের বিপরীতে জাপানি প্রতিপক্ষ করেন ২৭। ফলে ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম ও শেষ সেটে, যা হয়ে দাঁড়ায় শিরোপা নির্ধারণী।
এখানে চূড়ান্ত মুহূর্তে ধৈর্য, মনোসংযোগ ও মানসিক দৃঢ়তায় জয়ী হন আলিফ। শেষ সেটে ২৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে প্রতিপক্ষ মিয়াতার ২৬-এর বিপরীতে সোনা ছিনিয়ে আনেন এই বাংলাদেশি আর্চার। এটি তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন এবং দেশের জন্য গৌরবের এক অনন্য মুহূর্ত।
এই সাফল্য কোনো দৈববলে আসেনি। এর পেছনে ছিল আলিফের ধারাবাহিকতা, প্রস্তুতি আর দৃঢ় মনোবল।
সেমিফাইনালে চাইনিজ তাইপের পিন অ্যান চেনকে ৬-৩ ব্যবধানে হারান।
কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ ছিলেন তাইপেরই আরেক আর্চার তাই ইয়েন লিও, যাকে হারান ৭-৩ তফাতে।
তৃতীয় রাউন্ডে মালয়েশিয়ার মুহাম্মদ সায়াফিককে হারিয়েছেন ৬-৪।
দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিপক্ষ ছিলেন চীনের অ্যালিন, যাকে ৬-২ পয়েন্টে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরবর্তী ধাপে পা রাখেন আলিফ।
এই প্রতিটি ম্যাচেই আলিফ ছিলেন আত্মবিশ্বাসী ও নির্ভার। প্রতিপক্ষদের একের পর এক হারিয়ে উঠে এসেছেন শিরোপার লড়াইয়ে, আর সেখানে গিয়ে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছেন।
আর্চারিতে বাংলাদেশ এতটা স্বর্ণালী সাফল্য খুব বেশি দেখেনি। রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকার পর এখন আব্দুর রহমান আলিফ উঠে এলেন নতুন তারকার মতো। এশিয়া কাপে ব্যক্তিগত ইভেন্টে এই স্বর্ণ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এনে দিয়েছে নতুন আশা ও গর্ব।
বাংলাদেশ আর্চারি ফেডারেশনও আলিফের এই সাফল্যে খুশি। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকে আরও জোরালো করবে। আলিফকেও দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও প্রশিক্ষণ যাতে করে তিনি ও তাঁর মতো তরুণ আর্চাররা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বড় অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।
আব্দুর রহমান আলিফের এই জয় শুধু একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; এটি একক প্রতিভা ও পরিশ্রমের ফলাফল যা পুরো জাতিকে গর্বিত করেছে। বিশ্বমঞ্চে আর্চারিতে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে এটি এক বড় পদক্ষেপ। এই জয় এক নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে—যেখানে আন্তর্জাতিক খেলাধুলার মঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা আরও বারবার উড়বে, আলিফদের হাত ধরে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ