
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট (সিএলপি) ইস্যু এখন থেকে সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমেই করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক গঠিত ‘বাংলাদেশ সিংগেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ) প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এই সিএলপি ইস্যু প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই নতুন সিদ্ধান্তটি বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) এনবিআরের প্রকাশিত এক অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এনবিআরের উদ্যোগে চালু এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানির জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট ইস্যু করার পুরো প্রক্রিয়া ডিজিটালভাবে সম্পন্ন করতে হবে। আর্থিক লেনদেন, বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং সরকারি নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
বিএসডব্লিউ সিস্টেমে নিবন্ধন করার জন্য আবেদনের সময় ব্যবসায়ী বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অবশ্যই তাদের বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (বিন) ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে বাধ্য থাকবেন। এতে সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং নিরাপদ হবে।
এই নতুন উদ্যোগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা অর্জিত হবে, যা দেশের বাণিজ্য পরিবেশকে আরো গতিশীল করবে:
কমন প্ল্যাটফর্মে সব কার্যক্রম: আমদানি ও রফতানি পণ্যের জন্য প্রযোজ্য সার্টিফিকেট, লাইসেন্স ও পারমিট সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সরকারি ও আধাসরকারি সংস্থা যুগপৎভাবে অনলাইনে সম্পন্ন করতে পারবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ: সরকারি কাজে ব্যক্তিগত যোগাযোগের প্রয়োজন কমে আসায় দুর্নীতি হ্রাস পাবে এবং পুরো প্রক্রিয়া জবাবদিহিমূলক হবে।
সময় ও খরচ কমবে: অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে, ফলে ব্যবসায়ীরা সময় ও অর্থ উভয়ই বাঁচাতে পারবেন।
আস্থা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: দেশি ও বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়ে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
সার্টিফিকেট ইস্যুকারী ১৯ সংস্থা যুক্ত
এনবিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ক্ষেত্রে সিএলপি ইস্যুর অনলাইন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সংস্থার মধ্যে রয়েছে:
DGDA (ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট),
EPB (এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষ),
DoEX (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক্সপোর্ট বিভাগ),
BNACWC, BEZA, BEPZA (বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সংস্থা),
DoE (পরিবেশ অধিদপ্তর),
BSTI (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট),
BAERA, BAEC, CAAB, BTRC, DOF, DLS, PQW, BIDA, BGMEA, BKMEA, CCI&E সহ আরও অনেক সংস্থা।
এই সংস্থাগুলো এখন থেকে তাদের কর্তৃক ইস্যুকৃত সিএলপি শুধুমাত্র ‘বিএসডব্লিউ’ সিস্টেমের মাধ্যমে দাখিল করবে এবং এর বাইরে অন্য কোনো মাধ্যমে সনদ বা পারমিট গ্রহণ করা হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড জানায়, আগামী ৩০ জুন থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। এর পর থেকে এসব ১৯টি সংস্থা থেকে সিএলপি গ্রহণ করতে গেলে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই বিএসডব্লিউ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো মাধ্যমে সনদ সংগ্রহ করা আর সম্ভব হবে না।
এনবিআর সংশ্লিষ্ট সকল ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যে যুক্ত অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, নতুন সিস্টেমে রূপান্তর দ্রুত এবং সফল করতে বিএসডব্লিউ সিস্টেম বাস্তবায়নে সহযোগিতা করার জন্য।
অনলাইন সিস্টেমের ব্যবহার ও সিএলপি ইস্যু বিষয়ে যেকোনো সাহায্য, তথ্য ও নির্দেশনার জন্য ব্যবসায়ীরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কল সেন্টার হেল্পলাইন ১৬১৩৯-এ যোগাযোগ করতে পারবেন। এছাড়া এনবিআরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
এই ডিজিটাল উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি-রফতানি খাতের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ, দ্রুত ও আধুনিক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলমান জটিল ও কাগজপত্রভিত্তিক প্রক্রিয়া এখন থেকে অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ায় ব্যবসায়ীদের জন্য অসুবিধা কমবে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের গতি বাড়বে।
সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতায় এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ