
ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রবি চৌধুরীর একটি গানে তৈরি হওয়া ঝড় যেন আরও বড় রূপ নিয়েছে বিতর্কিত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলকে ঘিরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এই গান এবং তার সঙ্গে দেওয়া রবির মন্তব্য—সব মিলিয়ে দেশের সংগীতাঙ্গনে তৈরি হয়েছে তুমুল আলোচনার পরিবেশ। গানে ‘জাতীয় বেয়াদব’ বলে ইঙ্গিত করার পর স্পষ্টভাবে নোবেলকে উদ্দেশ্য করে রবি বলেন, “নোবেল গ্রেফতার হয়ে আবারও প্রমাণ করলো, সত্যিই সে জাতীয় বেয়াদব।”
‘বেয়াদব’ শিরোনামের গানটি রবি চৌধুরী নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রতি প্রকাশ করেন। গানটির শুরুতেই তিনি ঘোষণা করেন, “আমার এই গান আধুনিক জাতীয় বেয়াদবদের জন্য, যারা শিল্পী নামের কলঙ্ক।” এর পর থেকেই গানের কথায় উঠে আসে গুরু ও সিনিয়রদের প্রতি অসম্মান, সংগীতচর্চার অভাব, আদব-কায়দার অভাব, এবং ‘শিল্পী হওয়ার যোগ্যতা’ নিয়ে কঠিন প্রশ্ন।
গানটি ফেসবুকে শেয়ার করে রবি লিখেছেন, “নতুন প্রজন্মের আরও যারা বেয়াদব আছেন, যারা সিনিয়রদের সম্মান করেন না, তাদের গায়ে লাগবে এই গান। কিচ্ছু করার নেই। সময় থাকলে শুনে দেখুন। গায়ক-গায়িকা না হয়ে সবাই শিল্পী হও।”
গানটির একটি চরণ বিশেষভাবে নজর কাড়ে— “কেউ কি আছেরে ভাই, গুরুর কাছে গান শিখতে চাই / গান-বাজনা শেখার সাথে আদব-কায়দাও শেখা চাই”
এই চরণের মধ্য দিয়ে তিনি যেন গানের জগতে শৃঙ্খলার অনুপস্থিতি এবং শিক্ষার ঘাটতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
নোবেল সম্পর্কে রবির অবস্থান গানের বাইরেও স্পষ্ট। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, “নোবেল গ্রেফতার হয়ে আবারও প্রমাণ করলো, সত্যিই সে জাতীয় বেয়াদব।” এ বক্তব্য প্রকাশের পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ রবির বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করলেও অনেকেই এটিকে ‘অত্যন্ত কড়া এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ’ হিসেবে দেখছেন।
নোবেল এর আগেও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচনায় এসেছেন—মাদক, অসভ্যতা, স্টেজে অসংলগ্ন আচরণ, সহকর্মীদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য—এসবের জন্য বহুবার ভক্ত ও সংগীতপ্রেমীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে নোবেলের বিরুদ্ধে চলমান ধর্ষণ মামলাকে ঘিরেও নতুন মোড় নিয়েছে। মামলার বাদী ইডেন মহিলা কলেজের এক সাবেক শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে সম্পাদনের জন্য ঢাকার একটি আদালত থেকে অনুমতি চাওয়া হয়।
গত বুধবার (১৮ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে নোবেলের পক্ষে তার আইনজীবী আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, “মামলার বাদী ও আসামির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এখন তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে আগ্রহী। তাই জেলহাজতে থেকেই বিয়ের অনুমতি প্রদান করা হোক।” শুনানি শেষে আদালত এই আবেদন মঞ্জুর করেন এবং কারা কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
রবি চৌধুরীর গানকে কেন্দ্র করে নোবেলকে ‘জাতীয় বেয়াদব’ ঘোষণার সঙ্গে ধর্ষণ মামলা ও জেল থেকে বিয়ের মতো অপ্রত্যাশিত অধ্যায়—সব মিলে নোবেল যেন এখন বিতর্কের কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
সংগীতজগতের অনেক সিনিয়র শিল্পী আগেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, নোবেলের আচরণ ও চলাফেরা শিল্পীর মানদণ্ডে পড়ে না। কিন্তু রবির মতো একসঙ্গে গান এবং মন্তব্যের মাধ্যমে এত সরাসরি আক্রমণ—বাংলাদেশের সংগীত ইতিহাসে বিরল। এখন দেখা যাক, নোবেল কিংবা তার ঘনিষ্ঠরা এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান কি না। তবে আপাতত দেশের সংগীতাঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে একটাই শব্দ—‘জাতীয় বেয়াদব’।
বাংলাবার্তা/এমএইচ