
ছবি: সংগৃহীত
ঈদ মানেই বিনোদনের খোরাক, আর এই উৎসবের মরসুমে বাংলা সিনেমার বাজারে জমজমাট পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী—তাসনিয়া ফারিণ ও সাবিলা নূর। দীর্ঘদিন ছোটপর্দায় সুনাম কুড়ানো এই দুই অভিনয়শিল্পী এবার ঈদুল আজহায় বড় পর্দায় পা রাখলেন মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমার নায়িকা হয়ে। ‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’ নামে দুই আলোচিত চলচ্চিত্রে তাঁদের উপস্থিতি দর্শকদের মনে নতুন আশার আলো ছড়িয়েছে। ঈদের পর থেকেই চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে—ফারিণ ও সাবিলার নাম। একে বলা যেতে পারে—দুই নায়িকার সিনেমায় স্বর্ণযুগের সূচনা।
সাবিলার বড় পর্দায় অভিষেক: শাকিব খানের বিপরীতে সাহসী সিদ্ধান্ত
ছোটপর্দায় সাবিলা নূরের জনপ্রিয়তা দীর্ঘদিনের। নাটক, টেলিছবি, ওয়েব ফিকশন—সব মাধ্যমে নিজের অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। কিন্তু চলচ্চিত্রে তাঁর পথচলা এবারই শুরু। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তাণ্ডব’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সাবিলার, তাও আবার ঢালিউডের ‘মেগাস্টার’ শাকিব খানের বিপরীতে। এ অভিষেককে অভিনেত্রী নিজেই মনে করছেন জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
সাবিলা জানান, গত ঈদুল ফিতরের সময় পরিচালক রায়হান রাফী তাঁকে ‘তাণ্ডব’ ছবির প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “গল্পটা শুনেই মন জিতে নেয়। জানতাম, শাকিব খান ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকছেন। এমন সুযোগ হাতছাড়া করার কথা চিন্তাও করতে পারিনি। এর মধ্যে দুটি চমৎকার গান ছিল, চমৎকার সব কো-আর্টিস্ট ছিল। ছবিটা ছিল পুরোপুরি মেইনস্ট্রিম, কিন্তু ক্লাসিক্যাল ফ্লেভারের। তাই না বলার কোনো সুযোগই ছিল না।”
সিনেমার প্রচারণার সময় সাবিলা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন, কথা বলেছেন, ছবি তুলেছেন। দর্শকের এমন ভালোবাসা প্রথমবার বড় পর্দায় কাজ করে তাঁকে রীতিমতো অভিভূত করেছে।
কলকাতা থেকে ঢাকার সিনেমা: ফারিণের আন্তর্জাতিক যাত্রা
অন্যদিকে তাসনিয়া ফারিণের জন্য এটি একরকম ঘরে ফেরা। কারণ তিনি এর আগেই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অতনু ঘোষ পরিচালিত ‘আরো এক পৃথিবী’ দিয়ে ফারিণর অভিষেক হয়েছে কলকাতার বড় পর্দায়। ছবিটি ভারতে প্রশংসিত হয় এবং ফারিণের ঝুলিতে জমে একাধিক পুরস্কার।
বাংলাদেশেও তিনি এর আগে ধ্রুব হাসান পরিচালিত ‘ফাতিমা’ ছবিতে অভিনয় করেছেন, যেটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে এবং পুরস্কৃতও হয়েছে। তবে মূলধারার ঢাকাই বাণিজ্যিক সিনেমায় তাঁর আগমন এবারই।
ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘ইনসাফ’-এ পুলিশ অফিসার জাহান খান চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের চমকে দিয়েছেন ফারিণ। সিনেমাটির একাধিক অ্যাকশন দৃশ্যে তিনি নিজেই অংশ নিয়েছেন, যা ছিল তাঁর জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।
নিজের ভেতরের শক্তি খুঁজে পেয়েছেন: ফারিণ
অভিনয়ের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ফারিণ বলেন, “আমি যখন অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে যাই, তখন মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতির কোনো বিকল্প ছিল না। প্রতিটি স্টান্টের আগে আলাদা করে শিখেছি, চর্চা করেছি। অ্যাকশন পরিচালকদের কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়েছি। সত্যি বলতে, একাধিকবার আঘাত পেয়েছি, কিন্তু থামিনি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিল, এই চরিত্রটা আমাকে অন্যরকম জায়গায় নিয়ে যাবে।”
ফারিণ আরও বলেন, “আমি সব সময়ই নিজের অভিনয়জীবনে বৈচিত্র্য চেয়েছি। এবার মনে হয়েছে, ইনসাফ ছবির মাধ্যমে আমি নিজেকে অন্য এক জায়গায় নিতে পেরেছি। এখন আমার পুরো মনোযোগই সিনেমার দিকে।”
ঈদের ব্যস্ততা ও দর্শকদের ভালোবাসা
ঈদের সময়টায় যেখানে অন্যান্য বছর তাঁরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতেন, এবার তাঁদের দিন কেটেছে সিনেমা হল ঘিরেই। কারণ একটাই—প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি মিলিত হওয়ার অভিজ্ঞতা। হাসিমুখে ছবি তোলা, দর্শকদের ফিডব্যাক শোনা, উল্লাসের ভিড়ে মিশে যাওয়া—সবকিছু মিলিয়ে এই ঈদটা দুই তারকার জীবনে হয়ে উঠেছে স্মরণীয়।
এই অভিজ্ঞতা তাঁদের মধ্যে নতুন এক আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে। দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা, সিনেমার সফলতা এবং মূলধারার সিনেমায় অবস্থান তৈরি করা—সব মিলিয়ে বলা যায়, সাবিলা ও ফারিণের বৃহস্পতি এখন সত্যিই তুঙ্গে।
নতুন অধ্যায়ের সূচনা
সিনেমা পাড়ার গুঞ্জন বলছে, এই দুই অভিনেত্রী ইতোমধ্যে নতুন বেশ কয়েকটি ছবির প্রস্তাব পেয়েছেন। তাঁদের পেশাদারিত্ব, দর্শকপ্রিয়তা এবং চরিত্রে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা দেখে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন কাজ করতে।
তবে এখনই তাঁরা বেছে বেছে কাজ করতে চান। কারণ তাঁরা চান, প্রথম অভিষেকের পর তাঁদের প্রতিটি কাজ হয়ে উঠুক মানসম্মত ও দর্শক মনে দাগ কাটা।
সর্বোপরি বলা যায়, তাসনিয়া ফারিণ ও সাবিলা নূরের মাধ্যমে ঢাকাই সিনেমা নতুন দুই নায়িকা পেল, যারা কেবল মুখই নয়—অভিনয় দিয়েও পর্দায় ছড়িয়ে দিতে পারেন আলাদা ঝলক। যদি এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন, তাহলে তাঁরা হতে পারেন আগামী দিনের অন্যতম শীর্ষ চলচ্চিত্র তারকা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ