
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান যুগে ডিজিটাল ডিভাইস ও কম্পিউটার আমাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আর এই কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদানের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হল ইউএসবি পোর্ট। তবে এই ইউএসবি পোর্ট কখনো কখনো ‘দ্বার’ হিসেবে কাজ করে ক্ষতিকর ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার কম্পিউটারে প্রবেশের জন্য। অনেক সময় ব্যবহারকারীরা এর গুরুতর ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন না থাকায় তাদের মূল্যবান তথ্য, নেটওয়ার্ক সুরক্ষা ও ডিভাইস সুরক্ষায় বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।
এই প্রতিবেদনে আমরা জানব কীভাবে ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশ করে এবং কম্পিউটার সুরক্ষায় কী কী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ইউএসবি পোর্ট কেন হয় ঝুঁকিপূর্ণ?
ইউএসবি পোর্ট দিয়ে বাইরের ডিভাইস যেমন পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্ক, কিবোর্ড, মাউস ইত্যাদি সহজেই কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। কিন্তু এই ইউএসবি ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষতঃ নিচের কারণগুলো এই ঝুঁকি বাড়ায় —
১. অটোরান (Autorun)/অটোপ্লে (Autoplay) ফাংশন
পুরনো উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ইউএসবি ড্রাইভ সংযুক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে অটোরান ফাংশন চালু হয়ে যেত, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার সক্রিয় করে দিতে পারে। যদিও আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমে এটি নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে পুরনো সিস্টেম বা বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ফাংশন এখনও ঝুঁকি সৃষ্টি করে।
২. ইনফেক্টেড ফাইল
ইউএসবি ড্রাইভে ভাইরাস সংবলিত ফাইল লুকিয়ে রাখা যায়। ব্যবহারকারী যখন ওই ফাইল খুলে, তখন ভাইরাস দ্রুত সিস্টেমে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. ফরম্যাটেড ড্রাইভেও ম্যালওয়্যার থাকতে পারে
অনেক সময় ইউএসবি ড্রাইভ ফরম্যাট করার পরেও ম্যালওয়্যার পুরোপুরি পরিষ্কার না হয়ে থেকে যায়, যা পুনরায় সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
৪. দূষিত ইউএসবি ডিভাইস
শুধু পেনড্রাইভ নয়, ইউএসবি সংযুক্ত যেকোনো ডিভাইস যেমন কিবোর্ড, মাউস বা অন্য যন্ত্রাংশেও ম্যালওয়্যার থাকতে পারে, যা সংযোগের সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারে প্রবেশ করে।
কম্পিউটারের সুরক্ষায় করণীয় পদক্ষেপ
একটি নিরাপদ কম্পিউটার ব্যবহারের জন্য ইউএসবি পোর্টের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যকর পদক্ষেপ তুলে ধরা হলো—
১. অপরিচিত ইউএসবি ড্রাইভ থেকে দূরে থাকুন
অচেনা বা অবিশ্বাস্য উৎস থেকে প্রাপ্ত কোনো ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন হলে প্রথমে সেটি নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করুন।
২. অটোরান/অটোপ্লে ফাংশন বন্ধ করুন
আপনার অপারেটিং সিস্টেমের সেটিংসে গিয়ে অটোরান বা অটোপ্লে ফিচারটি নিষ্ক্রিয় রাখুন। উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা কন্ট্রোল প্যানেল থেকে ‘অটোপ্লে সেটিংস’ পরিবর্তন করে এটি করতে পারেন।
৩. আপডেটেড ও শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন
কম্পিউটারে সর্বদা নির্ভরযোগ্য ও নিয়মিত আপডেটেড অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল রাখুন। ইউএসবি ড্রাইভ সংযুক্ত করার আগে সেটি সম্পূর্ণ স্ক্যান করুন।
৪. সফটওয়্যার ও অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত আপডেট করুন
নিরাপত্তার জন্য উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনাক্সসহ আপনার সকল সফটওয়্যার নিয়মিত আপডেট করুন। এসব আপডেট নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলো দূর করে দেয়, যা হ্যাকারদের প্রবেশের পথ বন্ধ করে।
৫. গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন
যেকোনো অপ্রত্যাশিত সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের ব্যাকআপ নিন। এতে তথ্য হারানোর ঝুঁকি কমে যায়।
৬. আবশ্যক না হলে ইউএসবি পোর্ট বন্ধ রাখুন
যেখানে ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার প্রয়োজন নেই, সেগুলোতে ইউএসবি পোর্ট বন্ধ রাখা যেতে পারে। অনেক অফিস বা প্রতিষ্ঠানে এ জন্য সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যার ভিত্তিক লক ব্যবহার করা হয়।
৭. পাবলিক ইউএসবি চার্জিং স্টেশন থেকে বিরত থাকুন
পাবলিক চার্জিং স্টেশনগুলোতে ‘জুস জ্যাকিং’ নামে একটি সাইবার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে ডেটা চুরি বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ ঘটতে পারে। ব্যক্তিগত চার্জার ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অতিরিক্ত নিরাপত্তা পরামর্শ
ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহার শেষে ‘সেফলি রিমুভ’ বা ‘ইজিকলি ইজিট’ অপশন ব্যবহার করুন। হঠাৎ করে ইউএসবি খুলে ফেলা ভাইরাস প্রবেশের সুযোগ বাড়ায়।
ইউএসবি ড্রাইভে এনক্রিপশন ব্যবহার করুন যাতে তথ্য নিরাপদ থাকে।
প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে ‘ডিভাইস কন্ট্রোল সফটওয়্যার’ ব্যবহার করে ইউএসবি পোর্টের ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন।
কখনোই অজানা বা সন্দেহজনক ইউএসবি ড্রাইভ কম্পিউটারে সংযুক্ত করবেন না।
ইউএসবি পোর্ট: সুবিধা ও ঝুঁকির সঠিক ব্যবস্থাপনা
ইউএসবি পোর্ট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দ্রুত ও সহজে তথ্য আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হলেও এর মাধ্যমে ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই সাইবার নিরাপত্তার জন্য ইউএসবি ডিভাইসের সঠিক ব্যবহার ও সতর্কতা নেওয়া অপরিহার্য।
সঠিক জ্ঞান, নিয়মিত সতর্কতা এবং আধুনিক নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ইউএসবি পোর্টের ঝুঁকি কমিয়ে আপনার কম্পিউটার এবং তথ্যকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
আমাদের ডিজিটাল জীবনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে এখনই শুরু করুন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। সাইবার অপরাধী প্রতিরোধের এই যুদ্ধে ‘সতর্কতা’ আপনার প্রথম ও সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
বাংলাবার্তা/এমএইচ