
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার বিশ্ববাসীকে অবিলম্বে ইরানের রাজধানী তেহরান ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই সংকেত দেন, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। তবে ট্রাম্প কোনো নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করলেও, তার এই উক্তি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও তীব্র করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ট্রাম্পের পোস্টে বলা হয়, “সবাইকে এখনই তেহরান ত্যাগ করতে হবে।” যদিও তিনি সরাসরি কোনো হুমকি বা যুদ্ধবিরোধী পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেননি, তবে তার এই নির্দেশ আন্তর্জাতিক মঞ্চে ব্যাপক আলোচনা ও শংকার জন্ম দিয়েছে। একই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, “ইরান যদি আমার প্রস্তাবিত চুক্তি মেনে নিত, তাহলে আজকের প্রাণহানি এড়িয়ে যাওয়া যেত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনর্থক প্রাণহানি। আমি স্পষ্ট করে বলছি—ইরান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণ করতে পারবে না।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার অঙ্কন করছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর এখন ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ওপর।
এদিকে, তেহরানের পূর্বাঞ্চলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সোমবার বিকালে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। তেহরানের ওই অঞ্চলটি জনবহুল ও আবাসিক হওয়ায় হামলার ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং লোকজনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘প্রেস টিভি’র প্রতিবেদনে জানা গেছে, আইডিএফ পূর্ব তেহরানের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই ওই এলাকায় বোমাবর্ষণ শুরু হয়।
আক্রান্ত ও নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। তবে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পাল্টা জবাবের কারণে চলমান উত্তেজনা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা এখন ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ইসরাইল একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে তেহরানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুর ওপর, জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসরাইলি স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উত্তেজনা যদি দ্রুত কূটনৈতিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনা না হয়, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি ব্যাপক সামরিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলবে।
ট্রাম্পের কঠোর ভাষণ ও ইসরাইলি বিমান হামলার পর ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও সামরিক কার্যক্রম নিয়ে সতর্ক থাকলেও, এধরনের সরাসরি হুঁশিয়ারি এবং সামরিক আঘাত পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রনেতারা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুত মধ্যস্থতা করার আহ্বান জানাচ্ছেন। তবে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিক থেকে পরবর্তী কোনো ধাপে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তেহরান ত্যাগের হুঁশিয়ারি এবং ইসরাইলের পূর্ব তেহরানে বিমান হামলা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। সাম্প্রতিককালীন সংঘাত ও পাল্টা পাল্টি হামলার পেছনে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র ও সামরিক আধিপত্যের লড়াই, যা বিশ্ব রাজনীতিতে এক মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সংকট দ্রুত কূটনৈতিক মাধ্যামে মিটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের সাধারণ মানুষজন নির্বিঘ্নে জীবন যাপন করতে পারে এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ