
ছবি: সংগৃহীত
দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আটটি জেলার ওপর দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরের মধ্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাতও হতে পারে। আবহাওয়ার এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঝড়ের সম্ভাব্য গতিপথে থাকা জেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় দেওয়া এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এর পাশাপাশি এসব এলাকায় বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।
এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ১ নম্বর সংকেতের অর্থ হলো—আবহাওয়ার সাময়িক অবনতি হতে পারে এবং দমকা হাওয়ার কারণে নদীতে চলাচলকারী নৌযান, বিশেষ করে ছোট নৌযানগুলোকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই ঝড়বৃষ্টির প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে উপকূলীয় ও নদীসংলগ্ন এলাকাগুলোতে। বিশেষ করে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অভ্যন্তরীণ নদীপথ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া এবং বজ্রপাতের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এতে করে নৌযাত্রা, মাছ ধরাসহ জলপথে চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা এবং নোয়াখালীর চরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এসব এলাকায় সাময়িক দমকা হাওয়ার সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হলে স্থানীয় জনজীবন কিছুটা ব্যাহত হতে পারে। বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকায় খোলা জায়গায় কাজ করা কৃষক, শ্রমিক, জেলেদের প্রতি সতর্কতার আহ্বান জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ।
বজ্রঝড়ের সময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বছর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বজ্রপাত সাধারণত বিকেলের দিকে ঘনঘটা বেশি করে, তবে সকালের দিকেও ঝড়ো মেঘ তৈরি হলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই সতর্কতা হিসেবে বজ্রঝড় চলাকালে খোলা জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে। উঁচু গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, মোবাইল টাওয়ারের কাছাকাছি না যাওয়া এবং খোলা মাঠে না অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সংযোগ ব্যবহারেও সচেতন থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় টিভি, ফ্রিজ, ওয়াইফাই রাউটারসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় সব বিভাগেই এই সপ্তাহজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বজ্রপাতসহ দমকা হাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে কিছু এলাকায় ভারি বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে।
এই প্রবণতা শুধু সপ্তাহেই সীমাবদ্ধ নয়, আবহাওয়াবিদদের মতে, আগামী সপ্তাহেও এ রকম বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। তারা বলছেন, বর্ষাকাল শুরু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে এই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক, তবে স্থানভেদে এর মাত্রা ও প্রভাব ভিন্ন হবে।
ঝড়বৃষ্টির এই পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উপকূলীয় ও নিচু এলাকায় পানি নিষ্কাশনের পথ খোলা রাখতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, মাঠের ফসল যাতে অতিরিক্ত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ধান, সবজি ও আমনের চারা রক্ষায় কৃষকদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সাধারণ মানুষের জন্য কিছু নির্দেশনাও দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
নদীপথে ভ্রমণের আগে সর্বশেষ আবহাওয়া আপডেট জেনে নেওয়া
বজ্রপাত চলাকালে খোলা জায়গা বা উঁচু স্থানে অবস্থান না করা
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখা
স্থানীয় প্রশাসনের সতর্কতা ও নির্দেশনা অনুসরণ করা
প্রয়োজন হলে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়া
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু জেলা মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এই সতর্কবার্তা সাধারণত একদিনের জন্য হলেও এর ধারাবাহিকতা থাকতে পারে আরও কয়েকদিন। তাই প্রশাসন, নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট, রেডিও, টেলিভিশন এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন থেকে সর্বশেষ পূর্বাভাস ও সতর্কতা নিয়মিত জেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন দুর্যোগপূর্ণ সময়ে সচেতনতা ও আগাম প্রস্তুতিই পারে প্রাণ ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ