
ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধীন ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ (ডব্লিউজিইআইডি) সম্প্রতি বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছে। বৈঠকটি হয় সোমবার (১৬ জুন) রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত গুম তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে। এতে ডব্লিউজিইআইডি-এর ভাইস চেয়ার গ্রাজিনা করানোস্কা এবং সদস্য আনা লেরেনা ডেলগাদিলো পেরেজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে গুমের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা কে এম খালিদ বিন জামান জানান, বৈঠকে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানান এবং কমিশনের কার্যক্রম ও অগ্রগতির ব্যাপারে বিস্তারিত অবহিত করেন। তিনি বলেন, কমিশনের কাছে এ পর্যন্ত মোট ১৮৩০টি গুম সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়েছে এবং সবগুলো অভিযোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের আওতায় রয়েছে। পুলিশের কাছে গুমের শিকার হয়ে এখনও ফেরত না আসা ১০০টি অভিযোগ তদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে তিনটি কনসালটেন্সি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে তাদের বক্তব্য ও আকাঙ্ক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে।
কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন বৈঠকে জানান, যদিও লজিস্টিক, জনবল সংকট এবং রাজনৈতিক নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবুও কমিশন দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সকল অভিযোগের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তে তারা নিয়োজিত রয়েছেন।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কমিশনের কার্যক্রমের প্রশংসা করেন এবং গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও সময়োপযোগী তদন্ত, অভিযুক্তদের বিচারের দ্রুত প্রক্রিয়া চালানো এবং প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে গুম থেকে ফেরত না আসা ব্যক্তিদের সন্ধানে বিশেষ ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে, তারা কমিশনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং তার কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
বৈঠকটি ঘন্টাব্যাপী চলে, এতে কমিশনের অন্যান্য সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী ও মো. নূর খান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা তদন্ত ও নিষ্পত্তি কার্যক্রমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতা আরও সুসংহত হওয়ার প্রত্যাশা জাগিয়েছে।
গুমের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ ও তদন্তের জন্য সরকার ইতোমধ্যে স্থায়ী গুম তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। আইন উপদেষ্টা অফিস থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভবিষ্যতে এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াকে আরো শক্তিশালী করা হবে এবং গুমের শিকারদের পরিবারদের ন্যায্য বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
বাংলাদেশের গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের বৈঠক এক বার্তাবাহী ইঙ্গিত দিয়েছে যে, গুমের মতো সংবেদনশীল মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা আরও সমন্বিত ও কার্যকর হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মানবাধিকার হানির ঘটনা রোধ করা সম্ভব হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ