
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় দফার আলোচনার পরবর্তী পর্ব আজ (মঙ্গলবার) আবার শুরু হচ্ছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে সকাল ১১টায় এই আলোচনায় অংশ নেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
কমিশনের পক্ষ থেকে সোমবার পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে আজকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়, আজকের আলোচনা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কেন্দ্রিত হবে। প্রথমত, আগের অধিবেশনে শুরু হওয়া কিন্তু অসমাপ্ত থাকা আলোচনা সমাপ্ত করা হবে। এই অংশে আলোচিত বিষয়গুলো হলো—সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন, সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতির মনোনয়ন পদ্ধতি এবং সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের কার্যকর কৌশল। দ্বিতীয়ত, আলোচনায় উঠবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠনের প্রস্তাব—যার মধ্যে থাকবে নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ও কাঠামো। তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো—প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি সংস্কারের প্রস্তাব, যাতে করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরও সুসংহত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, আজকের আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি, যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথমে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করবেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য দেবেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিউজ চ্যানেল, বিটিভি-নিউজ। এর ফলে সাধারণ মানুষও ঘরে বসেই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা গঠনে চলমান আলোচনা প্রত্যক্ষ করতে পারবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার রূপরেখা তৈরি করা। এই কমিশনের অধীনে ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)-র সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন প্রথম দফার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে।
প্রথম পর্যায়ে গত ১৯ মে পর্যন্ত মোট ৪৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যাতে অংশ নেয় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ দেশের প্রধান ও বিকল্পধারার ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট। এসব আলোচনায় কয়েকটি প্রস্তাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য গড়ে উঠলেও, কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে মতানৈক্য রয়ে যায়। এসব বিষয়ে আরও গভীর আলোচনা এবং সমঝোতার লক্ষ্যে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু হয় ২ জুন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু হলেও, তিনটি বিষয় আলোচনার পর তা মুলতবি করা হয়। আজ সেই মুলতবি বৈঠকই আবার শুরু হচ্ছে।
এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে আজকের পর, আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবারও আলোচনা চলবে। তবে এই দুই দিনের জন্য নির্ধারিত আলোচ্য বিষয়সমূহ পরে জানানো হবে। বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন আলোচনাগুলো হবে অনেক বেশি গঠনমূলক এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কাঠামো নির্ধারণে তা একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক সংস্কার কাঠামো প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা দেশে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈরিতা কাটিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকার পরিচালনার নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ