
ছবি: সংগৃহীত
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে জাতিসংঘের ‘গুম’ (Enforced Disappearances) বিষয়ক কার্যনির্বাহী দলের (WGEID) ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সোমবার সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে এ কথা জানানো হয়েছে।
এই সাক্ষাৎ আলোচনায় ডব্লিউজিইআইডি’র ভাইস চেয়ারপারসন গ্রাজিনা বারানোভস্কা বিভিন্ন সময় র্যাব, ডিজিএফআই, বিজিবিসহ অন্যান্য সংস্থায় কর্মরত কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে ওঠা গুম ও অন্যায় নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এসব বিষয়ে সেনাবাহিনীর দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রক্রিয়াসমূহ সম্পর্কে স্পষ্টতা চান এবং মানবাধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা জানতে চান।
জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সেনাবাহিনীর অন্তর্গত সদস্যরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণাধীন থেকে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, সেনাবাহিনী এসব সংস্থার কর্মকাণ্ডে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপ করে না। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ থাকলে যথাযথ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে থাকে।
সেনাপ্রধান আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবাধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা দেশের আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে কাজ করছে। তিনি জানান, সেনাবাহিনী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান তদন্ত প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ মানবাধিকার রক্ষা এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়া, ভবিষ্যতে এই ধরণের অভিযোগ এড়াতে সমন্বিত কার্যক্রম ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।
ডব্লিউজিইআইডি হলো জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত দল যা জোরপূর্বক গুমের বিষয়ে নজরদারি, তদন্ত ও প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের সামরিক ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমালোচিত বিষয়। তবে সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের সামরিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জাতিসংঘের মধ্যে চলমান মানবাধিকার সংক্রান্ত সংলাপ ও সহযোগিতার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য এসব আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে মানবাধিকার রক্ষা ও গুমের মতো সংবেদনশীল বিষয়গুলো নিয়ে আরও স্বচ্ছতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশে গুম ও জোরপূর্বক নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যায়ে যে সমালোচনা ও উদ্বেগ রয়েছে, তা মোকাবেলায় সেনাবাহিনী এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে এই ধরনের সংলাপ খুবই প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান ও ডব্লিউজিইআইডি ভাইস চেয়ারপারসনের এ সাক্ষাৎ বাংলাদেশের মানবাধিকার ক্ষেত্রের উন্নতির দিকেই একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ