ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার একটি আদালত গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের সঙ্গে ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক ছাত্রী ও ধর্ষণ মামলার বাদীর বিয়ে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে। এ নির্দেশনা এসেছে উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে। এ ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে নোবেলের আইনজীবী আবেদন করেন, যেখানে আদালত সেটি মঞ্জুর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারাগার কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।
২০১৮ সালে ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী নোবেলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হন। এর পরবর্তী সময়ে নোবেল প্রায়ই মোবাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল বাদীকে মোহাম্মদপুরে তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ডেমরা এলাকায় নিজের বাসায় নিয়ে আসেন। সেখানে, বাদীর অভিযোগ অনুযায়ী, নোবেল এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজন তাকে আটকে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। নোবেল বাদীকে হুমকি দেন, ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে যদি সে তার নির্দেশ মানে না।
সাত মাস ধরে বাদী ওই বাসায় বন্দি ছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে নোবেলের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে এক নারীকে জোরপূর্বক নামাতে দেখা যায়। ভিডিও দেখে বাদীর পরিবার তাকে চিনে ফেলেন এবং ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে তাকে উদ্ধারের অনুরোধ করেন। পুলিশ ১৯ মে রাতে অভিযান চালিয়ে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে, আর নোবেল পালিয়ে গেলেও পরে গ্রেফতার হন।
২০১৯ সালে ‘সা রে গা মা পা’ রিয়েলিটি শো-তে তৃতীয় হওয়ার পর থেকে নোবেল আলোচনায় আসেন। তবে নানা বিতর্কের মাঝেও সম্প্রতি বিভিন্ন কনসার্ট ও অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন।
তবে ১৯ মে রাত ২টার দিকে ডেমরা থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা তার জামিন আবেদন করেননি, ফলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
নোবেলের আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, বাদী ও আসামির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলা হয়েছে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছুক। বিচারক এই আবেদনে সম্মতি জানিয়ে বলেন, “বিবাহ সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” এই নির্দেশ অনুযায়ী, কারা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্টরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
নোবেলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালে কুড়িগ্রামে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে দর্শকরা জুতা ও পানির বোতল ছোড়ে। এর আগে বহুবার নানা অভিযোগ ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন।
তবে এই ধর্ষণ মামলার মাধ্যমে তার ক্যারিয়ারে মারাত্মক ধাক্কা লেগেছে এবং সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এর নিন্দা জানিয়েছেন এবং এককথায় বিষয়টি নৈতিক ও আইনি প্রশ্নে ফেরা একটি বড় ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে।
নোবেল ও বাদীর বিয়ের নির্দেশনাই এই গম্ভীর ঘটনা সমাধানের জন্য আদালতের দিক থেকে একটি বিরল পদক্ষেপ। তবে এটি আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বিবেচিত হবে। সামাজিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই মামলার গুরুত্ব অপরিসীম।
বিষয়টি পরবর্তী সময়ে বিচার প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব ফেলে এবং নোবেল ও বাদীর ভবিষ্যৎ জীবন কেমন হবে, তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিবাহ উদ্যোগ হয়তো অনেকের চোখে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



