
ছবি: সংগৃহীত
জানাজার নামাজে অনেক সময় শুনতে পাওয়া যায় যে, মুসল্লিদের তিন কাতারে দাঁড় করানো বা তিন কাতার করা আবশ্যক এবং তা না করলে জানাজার নামাজ পূর্ণ হয় না। কিন্তু ইসলামি শিক্ষায় এ বিষয়টি কোনো জরুরি শর্ত নয়; বরং এটি মুসতাহাব বা ভালো কাজ হিসেবে গণ্য। এ প্রসঙ্গে প্রামাণ্য হাদিস ও ফিকহি মতামত তুলে ধরে বিশদভাবে জানানো হলো।
আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বলেছিলেন, “যে কোন মুসলমানের জানাজার নামাজ জীবিত মুসলিমরা তিন কাতারে পড়বে, আল্লাহ্ সে মৃত ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩১৫৮)
এই হাদিসে মজলুম মালিক ইবন হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি জানিয়েছেন, মালিক ইবন আনাস (রহঃ) যখন কোন জানাজার সামনে লোক কম দেখতে পেতেন, তখন জানাজার মুসল্লিদের তিন কাতারে ভাগ করে দাঁড় করাতেন।
এই হাদিস ও সাহাবীদের ঐতিহ্যের আলোকেই ফকীহরা বলেছেন, যদিও মুসল্লির সংখ্যা কম হলেও যত সম্ভব তিন কাতারে দাঁড় করানো মুসতাহাব; অর্থাৎ ভালো ও সুন্নত কাজ। মুসল্লির সংখ্যা বেশি হলে তিনের অধিক কাতার করাও জায়েজ এবং এতে একই ফজিলত পাওয়া যাবে। (শরহুল মুসলিম নববী, ৭/১৭; শরহুল মুনইয়াহ, ৫৮৮)
জানাজার নামাজে মোট চারটি তাকবির পড়তে হয়। তবে ঈদের নামাজের মতো হাত তোলা বা ন্যায় হাত উত্তোলনের শর্ত এখানে নেই।
নামাজের নিয়ত করতে হয় কিবলামুখী হয়ে, সাধারণত আরবি ভাষায় বা বাংলায় মনে মনে বা উচ্চারণ করে। উদাহরণ স্বরূপ আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ ...
বাংলায় উচ্চারণ করা যায়, “আমি চার তাকবিরের সঙ্গে ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুমের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।”
নিয়তের ভাষা মরহুমের লিঙ্গ অনুসারে ভিন্ন হতে পারে; পুরুষ হলে ‘লিহাযাল মাইয়্যেতে’, নারী হলে ‘লিহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলা হয়।
নামাজের অংশসমূহ
১. প্রথম তাকবির: আল্লাহু আকবার বলার সাথে সাথে হাত তুলে সানা পড়তে হয়। সানার আরবি হলো:
"سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ ..."
২. দরুদ শরীফ: সানা পড়ার পর দরুদ শরীফ পড়তে হয়, যেমন সাধারণ নামাজের তাশাহুদের পরে পড়া হয়। দরুদ শরীফের আরবি ও বাংলা উচ্চারণ জানা জরুরি।
৩. তৃতীয় তাকবির ও জানাজার দোয়া: তৃতীয় তাকবির শেষে জানাজার বিশেষ দোয়া পড়তে হয়। উদাহরণ:
"اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا ..."
৪. চতুর্থ তাকবির ও সালাম: শেষ তাকবির শেষে কিছুক্ষণ নীরব থেকে বাম ও ডানদিকে সালাম ফিরিয়ে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়।
নাবালক বা অবয়ব (নাবালক ছেলে ও মেয়ে) জন্য আলাদা আলাদা দোয়া রয়েছে, যা জানাজার নামাজে পড়া প্রয়োজন।
কেন তিন কাতার করা মুসতাহাব?
তিন কাতারে মুসল্লিদের দাঁড় করানো মূলত জানাজার মর্যাদা বৃদ্ধি এবং মুসল্লিদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরিতে সহায়ক। এছাড়া এর মাধ্যমে জানাজার নামাজ আরও সুন্দর ও সাবলীল হয়।
তিন কাতার করা জানাজার নামাজের জন্য জরুরি নয়, বরং মুসতাহাব বা সুন্নত।
যদি মুসল্লির সংখ্যা কম হয়, তিন কাতার করার চেষ্টা করা ভালো।
মুসল্লি বেশি হলে তিনের বেশি কাতার করাও ফজিলতপূর্ণ।
জানাজার নামাজ চার তাকবির নিয়ে আদায় করতে হয়, এতে হাত তোলা ঈদের নামাজের মতো নয়।
নিয়ত, সানা, দরুদ শরীফ ও জানাজার দোয়া যথাযথভাবে পড়া জরুরি।
নামাজ শেষে সালাম দিয়ে জানাজার নামাজ শেষ হয়।
জানাজার নামাজের ক্ষেত্রে মুসল্লিদের তিন কাতারে দাঁড় করানো একটি প্রিয় সুন্নত ও ভালো আমল, কিন্তু তা কোনো কড়া শর্ত নয়। তাই কেউ যদি এক বা দুই কাতারে জানাজার নামাজ আদায় করে, তাহলে জানাজার নামাজে কোনো অবৈধতা বা ভুল ধরা হবে না। তবে ইসলামের আদব অনুযায়ী মুসল্লিদের যতটা সম্ভব সম্মিলিতভাবে তিন কাতার বা তার বেশি কাতারে দাঁড় করিয়ে জানাজার নামাজ পড়া উত্তম এবং এতে মরহুমের জন্য বিশেষ বরকত ও ফজিলত লাভ হয়।
এই ব্যাখ্যা ও নির্দেশনা হাদিস এবং ফিকহের প্রামাণ্য গ্রন্থ থেকে নেয়া, যা সুস্পষ্টভাবে জানাযায় যে, তিন কাতার করা জরুরি নয়; তবে তা অনুশীলন করলে আল্লাহর বিশেষ পুরস্কার পাওয়া যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ