
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামিক শরীয়তে গোসল ফরজ হওয়ার অর্থ হলো শরীর থেকে কিছু বিশেষ নাপাকি বা অনুষঙ্গ দূর করার জন্য গোসল করা আবশ্যক হয়ে যাওয়া। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই গোসল ফরজ হয়ে গেলে কিছু কাজ নিষিদ্ধ এবং কিছু কাজ অবশ্যই পরিমিত ও সঠিক নিয়মে সম্পন্ন করতে হয়। ইসলামী আইনের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হলো।
গোসল ফরজ হওয়ার প্রধান কারণ হলো – জেনাবত অবস্থা, অর্থাৎ যৌনাঙ্গ থেকে নির্গত তরল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শরীরের পরিপূর্ণ গোসলের প্রয়োজন। এছাড়া মাসিক ও স্তনবৃন্তকালীন স্ত্রীর জন্যও গোসল ফরজ। পুরুষদের জন্য যখন গোসল ফরজ হয়, তখন শরীরের অবস্থা এমন হয় যে গোসল না করলে নামাজ আদায়, কুরআন স্পর্শ, তাওয়াফ করা এবং মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
ইসলামী শাস্ত্রবিদরা একমত যে, গোসল ফরজ হওয়ার পর যতক্ষণ গোসল না করা হয়, ততক্ষণ নামাজ পড়া বা তাওয়াফ করা শরিয়তে জায়েজ নয়। একইভাবে কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআন শরিফ স্পর্শ করা এবং মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ। কারণ গোসল ফরজ হওয়ার অর্থ শরীর নাপাক অবস্থায় আছে, আর এসব ইবাদত এবং পূজামূলক কাজ সম্পাদনের জন্য শরীরের পবিত্রতা অপরিহার্য।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে দেখা যায়, একদিন রাসূল (সা.) মদিনার পথে আবু হুরায়রা (রা.)কে দেখেন। তখন তিনি জানাবাতের (গোসল ফরজ) অবস্থায় ছিলেন। আবু হুরায়রা নিজেকে নাপাক মনে করে রাসূল (সা.)র সঙ্গে বসতে ইচ্ছা করেননি এবং সরে দাঁড়ান। পরে গোসল করার পর আবার সাক্ষাৎ হলে নবীজী (সা.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, "কোথায় ছিলে?" আবু হুরায়রা (রা.) জানালেন, "আমি জানাবাতের অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি।" তখন নবীজী (সা.) জবাব দিলেন, "সুবহানাল্লাহ্, মুমিন নাপাক হয় না।" (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-২৭৯)
এই হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, সত্যিকারের বিশ্বাসী বা মুমিন নাপাক হতে পারেন না। অর্থাৎ তার জন্য এমন কোনো অবস্থা হয় না যে তিনি মসজিদ বা কুরআন স্পর্শ করতে পারেন না, তবে শরীরের প্রকৃত পবিত্রতার জন্য গোসল আবশ্যক।
গোসল ফরজ হওয়ার পর অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ যেমন খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা, হাঁটা-চলা ইত্যাদি একেবারে নিষিদ্ধ নয়। তবে, শরীর নাপাক থাকার কারণে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে রাখা এবং ওজু রেখে কাজ করা উত্তম ও সুন্নাত। এতে ব্যক্তির শরীর ও আত্মার পবিত্রতা বজায় থাকে।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজী (সা.) জানাবাতের অবস্থায় পানাহার কিংবা ঘুমানোর আগে নামাজের জন্য যেভাবে ওজু করতেন, ঠিক তেমনি সেই অবস্থায় গোসলের পূর্বে ওজু করে নিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-৩০৫)
এর অর্থ হলো, গোসল ফরজ হওয়ার পরও ছোট কাজ করার আগে, বিশেষ করে নামাজ পড়ার জন্য শরীর ও মনের পবিত্রতার প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এতে ইবাদত সঠিকভাবে আদায় সম্ভব হয়।
গোসল ফরজ হওয়ার পর পুরুষদের জন্য শরীর থেকে নাপাকি দূর করা এবং গোসল করা একান্ত প্রয়োজন। গোসল না করা অবস্থায় নামাজ আদায়, কুরআন স্পর্শ ও তাওয়াফসহ ইবাদত কার্য সম্পাদন নিষিদ্ধ। তবে দৈনন্দিন কাজকর্মে যতটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ওজু রাখা উত্তম। ইসলামের বিধান মেনে চললে শারীরিক ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতা বজায় থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।
গোসল ফরজ হওয়ার পর যা নিষিদ্ধ, তা মেনে চলা একজন মুমিনের জন্য অবশ্যক এবং এতে তার আধ্যাত্মিক উন্নতি ও সামাজিক মর্যাদা অটুট থাকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ