ছবি: সংগৃহীত
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সামরিক সংঘাত বিশ্ব রাজনীতিতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা যখন পূর্ণমাত্রায় রূপ নিচ্ছে, তখন আন্তর্জাতিক মহল থেকে একের পর এক উদ্বেগ ও হুঁশিয়ারি আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে আহ্বান জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বাংলাদেশ সময় শনিবার (১৪ জুন) ভোর ৫টা ১২ মিনিটে নিজের অফিসিয়াল এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন— “ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ এবং তেল আবিবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যথেষ্ট হয়েছে। এখন সময় এসেছে থামার। শান্তি ও কূটনীতির জয় হতে হবে।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই হস্তক্ষেপকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক’ হিসেবে দেখছে। সাধারণত মহাসচিব সংক্ষিপ্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ ভাষায় বক্তব্য দিয়ে থাকেন, কিন্তু এবারের বার্তায় তার কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা ও তীব্র উদ্বেগ।
তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। একটি আঞ্চলিক উত্তেজনা এখন বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ নিতে যাচ্ছে। এই সংঘর্ষ শুধু ইরান বা ইসরায়েলকে নয়, গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং তার বাইরের দেশগুলোকেও ভয়াবহ বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের মতে, একের পর এক সামরিক হামলা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া পাল্টা আঘাত এখন বিশ্বশান্তিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “ইসরায়েলের দিক থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয় ইরানের পরমাণু স্থাপনায়। আর তার পাল্টা জবাব আসে ইরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে তেল আবিবে আঘাত হেনে। এতে বহু সাধারণ মানুষ আহত হয়েছেন, কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। এই রক্তপাত আর চলতে দেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধের ভয়াবহতা কী, তা আমরা বারবার দেখেছি সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও গাজার মাটিতে। নতুন আরেকটি যুদ্ধমুখী সংঘর্ষ বিশ্বকে আরও পেছনে ঠেলে দেবে।”
বিবৃতিতে গুতেরেস জোর দিয়ে বলেন, “শান্তিই একমাত্র পথ। আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না। এই মুহূর্তে ইরান ও ইসরায়েলকে অবিলম্বে সমস্ত সামরিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমি উভয় পক্ষের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—জাতিসংঘ প্রস্তুত আছে, যদি প্রয়োজন হয় শান্তি প্রক্রিয়া বা মধ্যস্থতার জন্য। মানুষ ধ্বংস চায় না, তারা নিরাপত্তা চায়। আর সেই নিরাপত্তা আসবে শান্তির মাধ্যমেই।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের আহ্বানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, “গুতেরেস যা বলেছেন, আমরা সেটিকে পূর্ণ সমর্থন করি। যুদ্ধ নয়, আলোচনার পথেই সংকটের সমাধান হতে হবে।”
এছাড়া কাতার, তুরস্ক, জার্মানি, চীন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বার্তার কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি ও ইরানি সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে আক্রমণ কমে যাওয়ার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, নতুন করে কোনো বড় হামলার খবর পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “গুতেরেসের বার্তা শুধু প্রতীকী নয়, তা বাস্তবেও প্রভাব ফেলেছে। তিনি যদি আরও সক্রিয় হন, তাহলে হয়তো যুদ্ধ বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।”
মধ্যপ্রাচ্যে যখন আগুন জ্বলছে, তখন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এই বার্তা যেন আশার আলো হয়ে আসে। ‘যথেষ্ট হয়েছে, এবার থামুন’—এই বাক্যে শুধু আহ্বান নয়, রয়েছে মানবতার জন্য এক জোরালো আবেদন।
বিশ্ব এখন অপেক্ষায়—ইরান ও ইসরায়েল কি থামবে? নাকি এই সংঘর্ষ আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগোবে? সময়ই এর উত্তর দেবে, তবে আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের ভূমিকা যে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



