
ছবি: সংগৃহীত
বলিউডে এমন অনেক অভিনেতা রয়েছেন যারা সহ-অভিনেত্রীর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে গোপনে পছন্দ করে বসেন, আর সেই তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা জায়েদ খানও। তবে গোপনে নয়, তিনি নিজেই অকপটে স্বীকার করেছেন—সাবেক বিশ্বসুন্দরী ও বলিউড অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের প্রতি তার মুগ্ধতা বহু পুরনো। এক সময় নিজের লকার রুমে (ব্যক্তিগত গোপন ঘরে) রেখেছিলেন ঐশ্বরিয়ার ছবি। আর যখন ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে সিনেমায় কাজের প্রস্তাব পান, তখন এক মুহূর্ত দেরি না করে রাজি হয়ে যান।
সম্প্রতি বলিউড সাংবাদিক সিদ্ধার্থ কাননের সঙ্গে এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে জায়েদ খান খোলাখুলি কথা বলেন এই প্রসঙ্গে। তিনি জানান, ‘ঐশ্বরিয়া রাই শুধু অসাধারণ সুন্দরীই নন, বরং তিনি অত্যন্ত পেশাদার একজন অভিনেত্রী। তার সৌন্দর্য আর পরিশীলিত ব্যবহার আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করেছে।’
জায়েদ বলেন, “আমি তখন কেবল ইন্ডাস্ট্রিতে পা দিয়েছি। হঠাৎ একদিন আমার হাতে একটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, ‘এই ছবিতে ঐশ্বরিয়া রয়েছেন।’ আমি আর কিছু শুনতেই চাইনি। বলেছিলাম, কোথায় সই করব বলুন। আমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে, ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অভিনয় করতে পারব—এই ভেবে আমি খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “ঐশ্বরিয়া যখন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হলেন, আমি তখন থেকেই ওর ফ্যান। আমার লকার রুমে ওর একটা বড় ছবি ছিল। ও ছিল সত্যিকার অর্থেই এক স্বপ্নের মতো। পরবর্তীতে যখন বাস্তবে তার সঙ্গে কাজের সুযোগ পাই, তখন বুঝতে পারি তিনি কেবল রূপেই নয়, কাজের প্রতি আন্তরিকতাতেও অসাধারণ।”
ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে জায়েদ খান বলেন, “ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি খুব সহযোগিতাপরায়ণ। কখনোই কোনো অহংকার বা অদ্ভুত আচরণ দেখিনি। বরং প্রতিটি দৃশ্যে তিনি এমনভাবে সাড়া দিতেন যেন আপনি নিজের সেরাটা দিতে পারেন। উনি জানেন সহ-অভিনেতাকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয়।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় সিনেমার সেটে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মধ্যে বোঝাপড়া না থাকলে শুটিং কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু ঐশ্বরিয়া এমন একজন, যার সঙ্গে কাজ করলে আপনি আরাম পান, মানসিকভাবে স্বচ্ছন্দ থাকেন। সেটে সে সবসময় পেশাদার, শৃঙ্খলাপূর্ণ এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে।”
ঐশ্বরিয়া রাই ও জায়েদ খান একসঙ্গে কাজ করেছিলেন ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “শব্দ”-তে। এটি ছিল এক মনস্তাত্ত্বিক থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র, যেখানে তিনটি চরিত্রের মধ্যে তীব্র মানসিক দ্বন্দ্ব ও সম্পর্কের জটিলতা তুলে ধরা হয়।
এই ছবিতে ঐশ্বরিয়া রাই একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন, যার স্বামী সঞ্জয় দত্ত একজন খ্যাতিমান লেখক এবং জায়েদ খান তার সহ-অভিনেতা হিসেবে চরিত্রে আসেন। তিনজনের মধ্যে গড়ে ওঠা সম্পর্ক ও দ্বন্দ্বই ছবির মূল গল্প।
যদিও এই ছবি বক্স অফিসে বাণিজ্যিক সাফল্য পায়নি, তবে অভিনয় ও নির্মাণের কারণে এটি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়ায়। অনেকেই বলেন, এই ছবিতে ঐশ্বরিয়া অভিনয়ের একটি ভিন্ন মাত্রা দেখিয়েছিলেন এবং জায়েদ খানও তার অভিনয়ে পরিপক্বতার প্রমাণ দিয়েছিলেন।
ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে অভিনয় জীবনের সেই অধ্যায়কে জায়েদ খান আজও গর্বের সঙ্গে মনে রাখেন। তিনি বলেন, “আমার জন্য সেটা ছিল এক স্বপ্নপূরণের সময়। আমি আজও বিশ্বাস করি ঐশ্বরিয়া শুধু বলিউড নয়, বিশ্বের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী ও সৌন্দর্যবতী নারী। তার মতো একজনের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে পারা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম প্রাপ্তি।”
এই সাক্ষাৎকারে জায়েদ খান বারবারই ঐশ্বরিয়ার সৌন্দর্য নয়, বরং তার পেশাদারিত্ব ও মানবিক গুণাবলির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আজকের দিনে যখন অনেকেই শুধু ক্যামেরার সামনে সুন্দর দেখাতে ব্যস্ত, তখন ঐশ্বরিয়া ছিলেন এক অনন্য ব্যতিক্রম। তার সৌন্দর্য, ব্যবহার, ব্যক্তিত্ব—সবকিছু মিলেই তিনি সত্যিকারের ‘স্টার’। এবং আমি সেই অভিজ্ঞতার অংশ হতে পেরে কৃতজ্ঞ।”
এই আলাপচারিতা আবারও প্রমাণ করে, বলিউডের গ্ল্যামার জগতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পেশাদারিত্ব ও মুগ্ধতার গল্প এখনও মানুষকে স্পর্শ করে। এমন আন্তরিক স্বীকারোক্তি যেন বলিউডের এক প্রান্তে থাকা বন্ধুত্ব, সম্মান এবং নস্টালজিয়ার এক উষ্ণ পরশ হয়ে থাকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ