
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প খাত এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে, যার প্রধান কারণ হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির তীব্র অভাব। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ২০০টি প্লাস্টিক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। প্লাস্টিক শিল্প সংশ্লিষ্টদের সংগঠন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, নতুন কোনো বিনিয়োগও এই সংকটের প্রভাবে থেমে গেছে। এর আগে দেশের প্লাস্টিক শিল্পের সংখ্যা ছয় হাজারেরও বেশি ছিল, যা এখন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে। শিল্পের এই পতনের পেছনে সরবরাহ ব্যবস্থা ও নীতি ঘাটতি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে অবস্থিত বিপিজিএমইএর সম্মেলনকক্ষে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যেখানে শিল্পের বর্তমান সংকট, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সরকারের কাছে চাহিদি তুলে ধরা হয়। সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অনিয়মিত সরবরাহের কারণে প্লাস্টিক শিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখোমুখি এবং হাজারো কর্মী কাজ হারাচ্ছেন।”
তিনি আরও বলেন, “একসময় এই খাতে ছয় হাজারের বেশি কারখানা কার্যক্রম চালিয়ে আসত, কিন্তু বর্তমান সংকটে তা আজকে একাংশে সীমাবদ্ধ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন কোনো বিনিয়োগও হচ্ছে না।”
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের মধ্যে প্লাস্টিক শিল্পের দাবিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিপিজিএমইএ নেতারা সরকারের প্রতি দাবি জানান, তারা যেন প্লাস্টিক শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করেন। শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য এটি অপরিহার্য।
এছাড়া তারা উল্লেখ করেন, প্লাস্টিকশিল্পের রপ্তানি উন্নয়নে প্রয়োজন আমদানি যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামালের ওপর শুল্কহার টেক্সটাইল শিল্পের মতো মাত্র ১ শতাংশে নামিয়ে আনার। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলো (এসএমই) বিশেষ বিবেচনার আওতায় আনার জন্য সরকারকে আহ্বান জানানো হয়।
বিপিজিএমইএ গতকাল সরকারের কাছে প্লাস্টিক শিল্পের জন্য মোট ১৫টি সংশোধিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রধানত, এসব প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য আমদানি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের ওপর শুল্ক হ্রাস ও কর সুবিধা নিশ্চিত করা, যা শিল্পের উৎপাদন খরচ কমিয়ে দিতে সাহায্য করবে।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুল্ক হ্রাস এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ ছাড়া প্লাস্টিক শিল্পে টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব। এই খাত দেশের রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং কোটি কোটি কর্মসংস্থানের উৎস।
বিপিজিএমইএ সভাপতি সামিম আহমেদ আরও বলেন, “বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট দ্রুত সমাধান করা না হলে প্লাস্টিক শিল্পের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে। এটি শুধু ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয় নয়, দেশের অর্থনীতিতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই শিল্পে অব্যাহত সংকট অব্যাহত থাকলে আমদানি নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর ফলে প্লাস্টিকজাত পণ্য রপ্তানি কমে যাবে এবং কর্মসংস্থানের অবনতি ঘটবে।
বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্প এখন এক সংকটময় সময়ের মুখোমুখি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির অনিয়মিত ও সীমিত সরবরাহ এবং উচ্চ শুল্কের কারণে এই শিল্পে বড় ধরনের ধস নেমে এসেছে। বিপিজিএমইএ’র দাবি ও প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। তবে সরকারের সদিচ্ছা ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের আশা কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ