
ছবি: সংগৃহীত
নারীদের ক্রিকেটে আরেকটি বড় মঞ্চ প্রস্তুত। ক্রিকেটের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ এবং প্রতীক্ষিত আসর—আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬–এর সূচি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক মাটিতে, ২০২৬ সালের ১২ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত। এবারই প্রথম টুর্নামেন্ট শুরুর এক বছর আগেই সম্পূর্ণ সূচি প্রকাশ করল আইসিসি।
বিশ্বকাপের এবারের আয়োজন হবে আরও বড় পরিসরে। অতীতে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১০টি দল অংশ নিলেও ২০২৬ সালে দল সংখ্যা বাড়িয়ে ১২ করা হয়েছে। এতে করে আরও বেশি দেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাবে এবং বিশ্বকাপের প্রতিযোগিতা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী ১২ দলকে দুইটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে থাকবে ৬টি দল করে। এর মধ্যে রয়েছে রোমাঞ্চ, ঐতিহ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তাপ।
গ্রুপ-১:
অস্ট্রেলিয়া (বর্তমানে নারী ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল দল)
দক্ষিণ আফ্রিকা
ভারত
পাকিস্তান
বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দুটি দল
গ্রুপ-২:
ইংল্যান্ড (স্বাগতিক ও শক্তিশালী দল)
নিউজিল্যান্ড (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
শ্রীলঙ্কা
বাছাইপর্বের দুটি দল
ভারত ও পাকিস্তান নারী ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এই দুই দেশের পুরুষ ক্রিকেটের মতোই নারী ক্রিকেটেও তাদের দ্বৈরথ দারুণ জনপ্রিয়। ফলে আইসিসি নিশ্চিতভাবেই এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে আলাদা বিপণন ও প্রচার কৌশল গ্রহণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুরো বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের সাতটি ভেন্যুতে। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ঐতিহাসিক মাঠ, যা আগে শুধু পুরুষদের বড় ম্যাচেই ব্যবহৃত হতো। এখন নারী ক্রিকেটও সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে, যা নারী ক্রীড়ার অগ্রযাত্রার প্রতীক।
টুর্নামেন্টে মোট ম্যাচ হবে ৩৩টি।
দুটি সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের দ্য ওভালে।
ফাইনাল হবে ঐতিহাসিক লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, যা বিশ্ব ক্রিকেটের ‘মক্কা’ হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ হবে ১২ জুন, এজবাস্টনে। এতে স্বাগতিক ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। উদ্বোধনী ম্যাচেই চমকপ্রদ লড়াই প্রত্যাশা করা হচ্ছে, কারণ দুই দলই গত এক-দেড় বছর ধরে দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়ে আসছে।
আইসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৬ সালের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুধু প্রতিযোগিতামূলক নয়, বরং ক্রিকেটের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই প্রথমবারের মতো নারী বিশ্বকাপ আয়োজনের এত আগে সূচি প্রকাশ করা হলো, যাতে করে দলগুলোর প্রস্তুতির জন্য সময় থাকলেও, আয়োজক দেশ এবং ভেন্যুগুলোকেও আগে থেকেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
আইসিসির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২০২৬ সালের নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে নারী ক্রীড়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা আশা করছি, এটি নারী ক্রিকেটের আরও বড় সম্প্রসারণের পথ সুগম করবে।”
যদিও এখনও গ্রুপ পর্বের নির্দিষ্ট সূচি প্রকাশ হয়নি, তবে নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেট বিশ্ব এখন থেকেই অপেক্ষায় থাকবে ভারত-পাকিস্তান নারীদের ম্যাচের জন্য। এ ম্যাচ কবে, কোথায় হবে—তা জানতে ভক্তরা অধীর আগ্রহে বসে থাকবে।
নারী ক্রিকেটে যদিও এই দুই দলের লড়াই এখনো পুরুষদের মতো উত্তাপ ছড়ায় না, তবে গত কয়েক বছরে ভারত-পাকিস্তান নারীদের দ্বৈরথেও উত্তেজনা ও গুণগত মান বাড়ছে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে তাদের মুখোমুখি হওয়া নিঃসন্দেহে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠবে।
২০২৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুধু আরেকটি টুর্নামেন্ট নয়, বরং এটি নারী ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন এক যাত্রা। যেখানে অংশগ্রহণকারী দল বাড়ছে, স্টেডিয়ামগুলো হচ্ছে বিশ্বমানের, দর্শক ও সম্প্রচারকদের আগ্রহও বাড়ছে। আর এই বৃহৎ আয়োজনে ভারত-পাকিস্তানের মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা একই গ্রুপে থাকা টুর্নামেন্টকে আরও স্পন্দিত করে তুলেছে।
এখন অপেক্ষা ম্যাচের সূচি প্রকাশ, প্রস্তুতি, স্কোয়াড ঘোষণা এবং মাঠে বল গড়ানোর। এরপরেই শুরু হবে ব্যাট-বলের চরম লড়াই, গ্যালারিতে গর্জে উঠবে দর্শক আর বিশ্ব দেখবে—নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ