
ছবি: সংগৃহীত
গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট হাতে ইতিহাস লিখেছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। এই দুজনের ব্যাটে দ্যুতি ছড়ানো দিনে শুধু বড় রানের সম্ভারই গড়েনি বাংলাদেশ, বরং রেকর্ড বইয়েও যুক্ত হয়েছে একাধিক ঐতিহাসিক মাইলফলক। শুরুর ধাক্কা সামলে দিনের শেষে চতুর্থ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ২৪৭ রানের জুটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছে।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ যখন ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে, তখনই হাল ধরেন শান্ত ও মুশফিক। উইকেটের চারপাশে শট খেলে ধীরে ধীরে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন তারা। দিনের শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯২ রান। এই সময় শান্ত অপরাজিত ১৩৮ এবং মুশফিক ১০৬ রানে ব্যাট করছিলেন।
শান্ত ও মুশফিকের এই জুটি ইতোমধ্যেই উঠে এসেছে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে চতুর্থ উইকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি হিসেবে। এই রেকর্ডে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মুশফিক-মুমিনুল হকের ২৬৬ রানের জুটি। আর সব উইকেট মিলিয়ে এই ২৪৭ রানের পার্টনারশিপ বাংলাদেশ দলের সপ্তম সর্বোচ্চ জুটি।
অধিনায়ক হিসেবে শান্ত এই সেঞ্চুরির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার তৃতীয় শতক পূর্ণ করেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শতক রয়েছে মুশফিকুর রহিমের (৫টি)। এরপর আছেন সাকিব আল হাসান (৪টি), এবং তিনটি করে শতক নিয়ে শান্ত, মুমিনুল হক ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
এ সেঞ্চুরির মাধ্যমে শান্ত নিজের টেস্ট শতকের সংখ্যা ৬-এ উন্নীত করেন, যা তাকে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকায় স্থান দেয়। তার ওপরে আছেন মুমিনুল (১৩), মুশফিক (১২) ও তামিম (১০)।
অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম নিজের ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট শতক তুলে নিয়ে তামিম ইকবালকে (১০টি) ছাড়িয়ে যান। এখন তিনি মুমিনুল হকের (১৩টি) ঠিক নিচেই অবস্থান করছেন। টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের হয়ে রান, ইনিংস ধরে রাখার দক্ষতা, এবং পরিস্থিতি বুঝে খেলার অভিজ্ঞতা—সবকিছুর মিশেলে মুশফিক আবারও প্রমাণ করলেন কেন তিনি দলের জন্য অমূল্য।
শুধু তাই নয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে তার মোট রান এখন দাঁড়িয়েছে ১,৪৫১, যা এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। তিনি এই তালিকায় পেছনে ফেলেছেন আজহার আলি ও জো রুট-এর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের। এটি স্পষ্ট করছে, শ্রীলঙ্কা মুশফিকের জন্য যেন বিশেষ এক অনুপ্রেরণার উৎস।
শুরুতে ধাক্কা খেলেও এই দুই ব্যাটারের দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস এবং নিখুঁত টেম্পারমেন্টে দিনের শেষে বাংলাদেশ এখন স্বস্তিদায়ক অবস্থানে। ব্যাট হাতে দুজনেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। বিশেষ করে অধিনায়ক শান্তর ক্ষেত্রে এই ইনিংস অনেকদিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। নিজের নেতৃত্বে প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা শান্ত কেবল একটি সেঞ্চুরি উপহার দেননি, তার নেতৃত্বে দলের মধ্যেও তৈরি হয়েছে আস্থা ও বিশ্বাসের বার্তা।
দ্বিতীয় দিনেও শান্ত ও মুশফিকের লক্ষ্য হবে এই জুটিকে আরও বড় করে তোলা এবং দলের সংগ্রহকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া, যেখান থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বাংলাদেশের হাতে চলে আসবে। পাশাপাশি উইকেটে এখনও ব্যাটিং সহায়ক থাকায় ৩৫০-৪০০ রানের গণ্ডি পার করার লক্ষ্য পূরণে আশাবাদী দলের সমর্থকরা।
গল টেস্টের প্রথম দিন শেষে এইভাবে শান্ত ও মুশফিকের ব্যাটে শুধু রান নয়, আত্মবিশ্বাস আর রেকর্ডের জয়রথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ দল। এখন দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দিনে কেমন প্রত্যুত্তর দেয় শ্রীলঙ্কা বোলিং বিভাগ এবং কতদূর এগিয়ে যেতে পারে শান্ত-মুশফিকের এই মহাকাব্যিক জুটি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ