
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে গণতন্ত্রের এক নতুন সূচনা দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, "বহু বছর পর প্রথমবারের মতো দেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা, কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেতে যাচ্ছে। এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এক আনন্দময় ও আশাব্যঞ্জক অধ্যায় হতে যাচ্ছে।"
মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুসান রাইল। এ সময় নির্বাচন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা যে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে—এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনর্জন্ম। বহু বছর ধরে যে ভয়, দমন-পীড়ন এবং পক্ষপাতিত্বপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিল, এবার তার অবসান ঘটবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। নির্বাচনী পরিবেশ যাতে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর থাকে, সে জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সবধরনের সহায়তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।”
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল জানান, বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে তাদের দেশ নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক, কারিগরি এবং ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। এ লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়া ইউএনডিপির মাধ্যমে ২০ লাখ অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা দেবে, যা নির্বাচন কমিশনের অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী হোক। একটি স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতাতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
সাক্ষাৎকালে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে পাঁচ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারে পৌঁছেছে। গত পাঁচ বছরে এ বাণিজ্য বার্ষিক গড়ে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের টেক্সটাইল, ওষুধ, কৃষিপণ্য এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অস্ট্রেলিয়ায় বাজার আছে। পাশাপাশি আমরা খনিজসম্পদ, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।”
প্রধান উপদেষ্টা এ সময় বলেন, “বাংলাদেশ এখন কেবল রাজনৈতিক উত্তরণের নয়, এক সাংবিধানিক নতুন যাত্রাপথে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা এবং সমর্থন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “আপনারা যে শুধু নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন তা নয়, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে একটি বন্ধুরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন।”
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশে নতুন নির্বাচনী দিগন্তের সূচনা হয়েছে। তরুণ ভোটার, যারা আগে কখনও ভয়হীনভাবে ভোট দিতে পারেননি, এবার তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নির্বাচনকে নতুন মাত্রা দিতে পারে।
গণতন্ত্রের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশের এই নির্বাচন এক ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।
এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রশ্নবিদ্ধ ও সহিংস নির্বাচনী সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশাবাদ দিচ্ছে বর্তমান সরকার। আন্তর্জাতিক সহায়তা, তরুণদের আগ্রহ, এবং নির্বাচনী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্রিয় প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ হয়তো সামনে এগোচ্ছে একটি নতুন যুগের দিকে—যেখানে ভোট হবে উৎসব, গণতন্ত্র হবে বাস্তবতা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ