
ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্ভীকভাবে শহীদ হওয়া বীর শহীদদের পরিবারের জন্য সরকার একটি বহুমাত্রিক পুনর্বাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের জন্য স্থায়ী ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে নির্মিত এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এই ফ্ল্যাটগুলো শহীদ পরিবারদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হবে, যা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ও শ্রদ্ধার নিদর্শন।
প্রতিটি ফ্ল্যাট হবে প্রায় ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুটের, যা আধুনিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তৈরি করা হবে। নির্মাণের পর প্রতিটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৯৫ লাখ টাকা। তবে শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে এই ফ্ল্যাটগুলো বিনামূল্যে দেওয়া হবে। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের মোট বাজেট ৭৬১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি মিরপুর হাউজিং এস্টেটের ১৪ নম্বর সেকশনে, মিরপুর পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জমিতে বাস্তবায়িত হবে। এখানে ছয়টি ১৪তলা ও বারোটি ১০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে উন্নত মানের স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক ফিটিংস, লিফট, জেনারেটর, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, সোলার প্যানেল এবং রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের সুবিধা থাকবে। এছাড়া, প্রকল্প এলাকায় কমিউনিটি ভবন, খেলার মাঠ, বহির্বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ, কালভার্ট ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে, যা আধুনিক শহুরে জীবনের জন্য অপরিহার্য।
২০২৪ সালে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে শহীদ পরিবারগুলোর জন্য নিরাপদ, স্থায়ী এবং আধুনিক বাসস্থান নিশ্চিত করা হবে। এতে শহীদ পরিবারগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা দেয়া হবে এবং তাদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দরজা খোলা হবে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ‘৩৬ জুলাই’ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ শীর্ষক এই প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দ্রুত একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরের জুলাই মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুন মাসে সম্পন্ন হবে। নির্মাণকাজ শেষে এই ফ্ল্যাটগুলো সরাসরি শহীদ পরিবারদের মধ্যে বিতরণ করা হবে যাতে তারা স্থায়ীভাবে সেখানে বসবাস করতে পারেন।
জুলাই আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও উন্নয়নের জন্য সরকার আরও সাতটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলো ছয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে এবং আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মোট বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮১৩ কোটি টাকার আশেপাশে। এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা ও আত্মনির্ভরতা প্রকল্প, নারীদের জন্য সহায়তা প্রকল্প, আন্দোলনের স্মৃতি সংরক্ষণ প্রকল্প, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প এবং শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক স্থাপন প্রকল্প।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নূরুল বাসির জানান, শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন ও বসবাসের জন্য নেওয়া এ প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহীদদের নামের তালিকা অনুযায়ী ফ্ল্যাট প্রদান করা হবে, যদিও কিছু শহীদ গ্রামে নিহত হওয়ায় তারা হয়তো ঢাকায় ফ্ল্যাট নিতে নাও পারেন। প্রয়োজনে ভবিষ্যতে নতুন করে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটির গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য এডিপিতে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে শুধু অবকাঠামো নির্মাণ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিকভাবে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া বীর শহীদদের পরিবারের জন্য স্থায়ী ও আধুনিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করে সরকার তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শহীদ পরিবারগুলোকে সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রদান হবে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। একই সঙ্গে, সরকারের অন্যান্য সহায়ক প্রকল্পগুলো তাদের অর্থনৈতিক ও মানসিক পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস এবং শহীদদের ত্যাগকে দীর্ঘমেয়াদি শ্রদ্ধার মাধ্যমে স্মরণ করা সম্ভব হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ