
ছবি: সংগৃহীত
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)-এর প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও সরঞ্জাম আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাহিনীটিকে সময়োপযোগী ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলার লক্ষ্যে এক ধারাবাহিক প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বুধবার (১৮ জুন) সকালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এসএসএফ-এর ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে এসএসএফ সদস্যদের পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও দক্ষতার প্রশংসা করে তিনি বাহিনীর সার্বিক অগ্রগতির নানা দিক তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
ড. ইউনূস বলেন, “এসএসএফ একটি প্রশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল বাহিনী, যারা আমার এবং রাষ্ট্রপতির সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। গত ১০ মাসে তারা দেশ ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্ব অত্যন্ত সফলভাবে পালন করেছে। তাদের পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ এবং তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট কিছু যানবাহন ও সরঞ্জামে ক্ষয়ক্ষতি হলেও স্বল্প সময়ের মধ্যেই সেগুলো মেরামত করে কার্যক্ষম করে তোলা হয়েছে। এটা বাহিনীর দক্ষতা ও প্রস্তুতিরই একটি উদাহরণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বাহিনীটি অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় ছোট হলেও তাদের কাজের গুরুত্ব ও সংবেদনশীলতা অত্যন্ত বেশি। এই বাহিনী সরাসরি আমার নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। বঙ্গভবন, আমার বাসভবন, কার্যালয়সহ আমার প্রতিটি গমনাগমন ও কর্মকাণ্ডে তাদের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা দায়িত্ব রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঢাকার অভ্যন্তরে এবং বাইরে নানা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এসএসএফ অনুষ্ঠানগুলোর সুচারু ব্যবস্থাপনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি কক্সবাজার ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসএসএফ অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছে।”
ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রাষ্ট্রীয় সফরকালে এসএসএফ বিভিন্ন দূতাবাস, সংশ্লিষ্ট দেশের প্রটোকল বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। এতে আন্তর্জাতিক সফরগুলো নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক সফরগুলোতেও এসএসএফ সফলভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
“বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার ফলে নিরাপত্তা হুমকির ধরন ও প্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে,” বলেন অধ্যাপক ইউনূস। “এই প্রেক্ষাপটে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবুও এসএসএফ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মাঝেও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।”
তিনি বলেন, এসএসএফ নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা হুমকি বিশ্লেষণ করে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেয়। বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত রাখার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সাইবার নিরাপত্তার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “সম্প্রতি এসএসএফ ‘যমুনা’ নামের একটি সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুসংহত করেছে। এর মাধ্যমে বাহিনীটি বাহ্যিক হুমকি প্রতিরোধে এক নতুন স্তরে প্রবেশ করেছে। এখন থেকে তারা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সাইবার নিরাপত্তাও একইভাবে উন্নত করবে।”
ড. ইউনূস বলেন, “এসএসএফ একটি পেশাদার বাহিনী হিসেবে উন্নত প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তি এবং মনোবলের সমন্বয়ে দিন দিন আরও সক্ষম ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠছে। তাদের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।”
তিনি এসএসএফের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অংশগ্রহণ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করেছেন বলে জানান এবং ভবিষ্যতেও বাহিনীটির উৎকর্ষ সাধনে সকলকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এসএসএফ শুধু এক বাহিনী নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার এক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বাহিনী এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে আগামী দিনে এসএসএফ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে—এমনটাই প্রত্যাশা জাতির।
বাংলাবার্তা/এমএইচ