
ছবি: সংগৃহীত
টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা হলো নাটকীয়তায় ভরপুর—উত্থান-পতনের সেই স্রোতে বাংলাদেশ দল যেমন একাধিকবার বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল, তেমনই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে সব বাধা পেরিয়ে সেশনটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রেখে মধ্যাহ্ন বিরতিতে গেছে শক্ত ভিত গড়ে। ৪ উইকেটে সংগ্রহ ৩৮৩ রান—যেখানে দলের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের জুটি এখন প্রতিপক্ষের জন্য বড় এক মাথাব্যথা।
শ্রীলঙ্কার মাটিতে সিরিজের এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের শুরুটা যদিও এক মুহূর্তের জন্য বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক ছিল। আগের দিন দারুণ খেলতে থাকা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ফিরে গেলেন দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই। ১৪২ রানে একটি জীবন পেয়েও বেশিক্ষণ সুবিধা করতে পারেননি। দিনের শুরুতে একবার এলবিডব্লিউ হয়ে পড়লেও রিভিউ নিয়ে রক্ষা পান তিনি। তবে সেই দারুণ ইনিংসে আর মাত্র ৬ রান যোগ করেই এবার তিনি ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন আসিথা ফার্নান্দোর বলে। শ্রীলঙ্কা কিছুটা আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল সেখান থেকেই।
কিন্তু সেই আশাকে বেশি দূর যেতে দিলেন না বাংলাদেশের পরবর্তী দুই ব্যাটার—মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। দুই অভিজ্ঞের ব্যাটে গড়ে উঠল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং চোখে পড়ার মতো পঞ্চম উইকেট জুটি। তারা দু’জন মিলে সেশনের বাকি সময়টা দারুণভাবে সামলে নেওয়ার পাশাপাশি লঙ্কান বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরানো শুরু করেন।
মুশফিক ছিলেন বরাবরের মতো ধীরস্থির এবং ঠাণ্ডা মাথার। দিনের শুরুতে তাঁর রান ছিল ১০৫, সেখান থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে গেছেন ইনিংস, এই সেশনে করেছেন আরও ৩৬ রান। দেড়শ রানের মাইলফলক থেকে তখন মাত্র ৯ রান দূরে ছিলেন তিনি। অপরপ্রান্তে লিটন দাস ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মেজাজে—আক্রমণাত্মক এবং দৃঢ়চেতা। ৫৭ বলে তিনি করেছেন ৪৩ রান, যাতে ছিল চারটি চারের সঙ্গে একটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কাও, যেটি হাঁকিয়েছেন প্রবাথ জয়াসুরিয়াকে।
তবে মুশফিক-লিটনের এই পার্টনারশিপ ঝুঁকিমুক্ত ছিল না একেবারেই। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ইনিংসের ১০৩তম ওভারে। উইকেটের পেছনে ঠেলে দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন মুশফিক, কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলে থেমে যান। তবে ততক্ষণে লিটন দৌড়ে প্রায় মাঝপথ পার করে ফেলেছেন। রানআউট হয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল—কিন্তু শ্রীলঙ্কার এক ভুল থ্রো বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। লিটন তখন দ্বিতীয়বারের মতো জীবন পান এবং সেই জীবনই পরিণত হয় লঙ্কানদের শাস্তির রূপে।
একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটে পরে, যেখানে এইবার বিপদে পড়েন মুশফিক। লিটন মিড-অন অঞ্চলে বল ঠেলে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি রান নেন। স্ট্রাইক প্রান্তে ছুটে আসতে থাকা মুশফিক তখন প্রায় আউট হয়েই যাচ্ছিলেন, কিন্তু আবারও থ্রোটি সঠিক না হওয়ায় রক্ষা পেয়ে যান তিনি। দুটি বড় ভুল শ্রীলঙ্কার জন্য ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার সুযোগ এনে দিতে পারত—কিন্তু সেই ব্যর্থতার দায় এখন তাদের কাঁধেই।
সেশন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৮৩/৪। মুশফিক অপরাজিত ১৪১* এবং লিটন ৪৩* রান নিয়ে। এখন পর্যন্ত তাদের জুটিতে যোগ হয়েছে ৭৪ রান। সফরকারী দলের পক্ষ থেকে এমন একটি সেশন যে শুধুই রান তুলবার নয়, তা প্রমাণ করেছে তারা—এটি ছিল দৃঢ়তা, ভাগ্য এবং চাপ মোকাবিলার দারুণ একটি উদাহরণ।
বাংলাদেশ এই সেশনে শুধু রানই তুলেনি, বরং মানসিকভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটাও নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। এখন প্রশ্ন, পরবর্তী সেশনগুলোতে কি এই জুটি পারবে আরও বড় রূপ দিতে? আর লঙ্কানরা কি পারবে এই দুজনকে ভাঙতে? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে দিনের পরবর্তী পর্বে। তবে এই পর্যন্ত তো বলাই যায়—ঘটনাবহুল সেশন হলেও, জয়টা এই যুদ্ধে আপাতত বাংলাদেশেরই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ