
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম তারকা ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ঢাকার একটি আদালত। সোমবার (১৬ জুন) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বর্তমানে কমিশনের একটি চলমান অনুসন্ধানের আওতায় রয়েছেন। তাদের দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় দুদক আদালতে লিখিতভাবে আবেদন করে তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে। আদালত তা আমলে নিয়ে ১৫ জনের নামের তালিকাসহ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
কারা রয়েছেন নিষেধাজ্ঞার আওতায়?
এই তালিকায় শুধু জাতীয় তারকা সাকিব আল হাসান নন, আরও রয়েছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, একটি সমবায় প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবস্থাপক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, এমনকি একাধিক নারীও। আদালতের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ১৫ জন হলেন:
সাকিব আল হাসান (ক্রিকেটার)
মো. আবুল খায়ের (উপনিবন্ধক, সমবায় অধিদপ্তর)
কাজী সাদিয়া হাসান
আবুল কালাম মাদবর
কনিকা আফরোজ
মোহাম্মদ বাশার
সাজেদ মাদবর
আলেয়া বেগম
কাজী ফুয়াদ হাসান
কাজী ফরিদ হাসান
শিরিন আক্তার
জাভেদ এ মতিন
মো. জাহেদ কামাল
মো. হুমায়ুন কবির
তানভির নিজাম
কী অভিযোগ?
দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি সমবায়ভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কোটি টাকার বিনিয়োগ নেওয়া হলেও, বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী লভ্যাংশ বা মূলধন ফেরত দেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালী ও পরিচিত ব্যক্তিদের নামে বিনিয়োগ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়েছিল।
সাকিব আল হাসান এই বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের একজন ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হিসেবে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। তার উপস্থিতি ব্যবহার করে অনেক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা রেখেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সাকিব সরাসরি কোনো আর্থিক অনিয়মে জড়িত কি না, তা এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। তবে তার নাম থাকার কারণে তাকে আপাতত বিদেশে যাওয়া থেকে বিরত রাখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
কী বলছে দুদক?
দুদকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা এখনো অনুসন্ধানের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। কিন্তু যারা জড়িত, তারা যাতে হঠাৎ করে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্যই আদালতের অনুমতি নিয়ে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তদন্তের প্রয়োজনে যেকোনো সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।”
আইনি বিশ্লেষণ
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যখন কাউকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় বা তাকে নিয়ে তদন্ত চলছে, তখন তদন্তকারী সংস্থা আদালতের মাধ্যমে তার বিদেশ যাত্রা সীমিত করতে পারে। এটি সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির আলোকে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবির বলেন, “এটা একটি পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে বা তদন্ত চলছে, তখন তার দেশ ছাড়ার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। তবে শেষ পর্যন্ত যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হয়, তাহলে এই নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উঠে যাবে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
এই আদেশ অনুযায়ী, ১৫ জনের পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় তাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হবে। দুদকের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে না, তারা চাইলে আদালতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন করতে পারবেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের একজন সাকিব আল হাসান এবার দুর্নীতির তদন্তে জড়িয়ে দেশবাসীর মাঝে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। যদিও এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তবুও তার নাম এই ধরনের মামলায় আসায় ক্রীড়াঙ্গনে এক ধরনের চাপের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাকিবসহ ১৫ জন বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না, যা তদন্ত কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ