
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ আবারও জনস্বাস্থ্য সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে সরকারকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু ও করোনার যৌথ প্রভাব, চিকিৎসা অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং জনগণের উদাসীনতা—এই তিনটি মিলেই তৈরি হয়েছে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৯ জন। এই সময়ের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোট ৫,৯৮৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী।
বিশেষভাবে উদ্বেগজনক অবস্থা তৈরি হয়েছে বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় জেলা বরগুনায়। এখানে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বরগুনা সদর হাসপাতাল ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালটিতে বরাদ্দ শয্যা সংখ্যা মাত্র ৫০ হলেও বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন কয়েকগুণ বেশি রোগী। চিকিৎসক সংকট, আইভি স্যালাইনের ঘাটতি, রক্ত পরীক্ষার কিটের অভাব এবং স্থান সংকটে মেঝে ও করিডরে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে।
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১,৮৩৮ জন, এর মধ্যে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ২১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৭৯ জন। সরকারি হিসাবে মৃত্যুবরণ করেছেন ৬ জন। তবে বরিশাল ও ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন আরও ৮ জন বরগুনাবাসী।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজোয়ানুর আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চটা দেওয়ার। কিন্তু শয্যা, স্যালাইন, রক্ত পরীক্ষার কিট এবং জনবল সংকটে আমরা সীমিত হয়ে যাচ্ছি।’
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানিয়েছেন, বরগুনার পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে ১ হাজার ব্যাগ আইভি স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সাময়িকভাবে পদায়ন করা হয়েছে। মজুত রয়েছে নিজস্ব স্যালাইন স্টক, তবে বিকল্প উৎস থেকেও সরবরাহ প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। বিশেষত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার তুলনামূলক বেশি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু বিস্তারের আশঙ্কা আরও বাড়বে, সেইসঙ্গে হাসপাতালে চাপে চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়তে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ