
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। মধ্যপ্রাচ্যের দুই চিরবৈরী দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনার জেরে ইসরাইলের লাগাতার বিমান হামলায় রোববার (১৫ জুন) পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৪ জনে। হতাহতদের অধিকাংশই সাধারণ বেসামরিক নাগরিক, যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. হোসেইন কেরমানপুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে জানান, গত ৬৫ ঘণ্টায় ইসরাইলের ছোড়া বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রে ইরানের বিভিন্ন শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছেন ২২৪ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ১,২৭৭ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেরমানপুর বলেন, “হতাহতের মধ্যে ৯০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। স্কুল, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, এমনকি মসজিদের আশেপাশেও হামলা চালানো হয়েছে। যুদ্ধের শিকার হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ।” তিনি আরও জানান, মৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু রয়েছে, যারা স্কুলে যাওয়ার সময় বা বাড়িতে অবস্থানকালে বিমান হামলায় প্রাণ হারায়।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় মূলত ইরানের ইসফাহান ও নাতাঞ্জ অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়। এতে একাধিক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী প্রাণ হারিয়েছেন। ধ্বংস হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার ও ইরানের পরমাণু উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল কেন্দ্রগুলোর একটি।
ইসফাহান, শিরাজ, কোম, মাশহাদ, কেরমানশাহসহ বেশ কয়েকটি বড় শহরের ওপর হামলায় শত শত ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রূপান্তর করেছে।
এপির খবরে বলা হয়, আহতদের অনেকেই চিকিৎসা পাচ্ছেন না, কারণ একাধিক হাসপাতাল সরাসরি হামলার শিকার হয়েছে বা চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এছাড়া কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহও বিচ্ছিন্ন।
এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস দুই দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। যুদ্ধের পথ থেকে ফিরে আসতে হবে, নইলে অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নামবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ