
ছবি: সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে প্রথম টেস্ট শুরুর আর মাত্র দুই দিন বাকি। ঠিক এমন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে ছিটকে পড়েছেন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। রবিবার (১৫ জুন) গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলনের প্রথম দিনে দলের সঙ্গে দেখা যায়নি তাকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স।
এই অনুপস্থিতি শুধু এক জন খেলোয়াড়ের না খেলার বিষয় নয়—বরং গলে স্পিননির্ভর কন্ডিশনে এটি পুরো দলের কৌশল, ব্যাটিং-বোলিং ভারসাম্য এবং একাদশ নির্বাচনকে গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসান দলে না থাকায় মিরাজের কাঁধে দ্বৈত ভূমিকা—অলরাউন্ডিং অবদান ও স্পিন নেতৃত্ব—একযোগে পড়ে গেছে। এই অবস্থায় মিরাজকে না পাওয়া মানেই একটি বড় ধাক্কা।
গল টেস্টকে সামনে রেখে দলের অনুশীলনের প্রথম দিনেই যখন সকল খেলোয়াড় মাঠে, তখন মিরাজ অনুপস্থিত। তার অবস্থার আপডেট জানাতে গিয়ে কোচ ফিল সিমন্স বলেন, ‘আজ সকালে শেষ খবর পেয়েছি, ওর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গত কয়েক দিন ও জ্বরে ভুগলেও ওষুধে কিছুটা ভালো বোধ করছে। সন্ধ্যায় চূড়ান্তভাবে বুঝতে পারব সে কালকের অনুশীলনে ফিরতে পারবে কিনা। আমরা আশা করছি সে মাঠে ফিরবে এবং খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবে।’
কোচের আশাবাদী মন্তব্যের মাঝেই ফুটে উঠছে সতর্কতা। কারণ এখনো তাকে নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফলে একাদশ সাজানোতে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বাংলাদেশ দলের স্পিন আক্রমণের অন্যতম ভরসা মেহেদী হাসান মিরাজ। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের সঙ্গে মিরাজ গড়ে তুলেছেন এক অভিজ্ঞ ও কার্যকর স্পিন জুটি। বিশেষ করে উপমহাদেশের উইকেটে এই জুটি বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। গল, যেটি বরাবরই স্পিন সহায়ক ভেন্যু হিসেবে পরিচিত, সেখানে মিরাজের অনুপস্থিতি দলকে যথেষ্ট ব্যাকফুটে ফেলতে পারে।
সিমন্স বলেন, ‘এতে অবশ্যই কিছুটা দুশ্চিন্তা যোগ হয়। তবে এক জনের সমস্যা অন্য কারও জন্য সুযোগ এনে দিতে পারে। মিরাজ না খেললে অন্য কাউকে এগিয়ে আসতে হবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ দলে বিকল্প স্পিনার হিসেবে রয়েছেন নাসুম আহমেদ ও নাঈম হাসান। তবে তারা কেউই মিরাজের মতো অলরাউন্ড সামর্থ্য দেখাতে পারেননি এখন পর্যন্ত। ফলে ব্যাটিং গভীরতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
সিমন্স আরও জানান, এখনো একাদশ চূড়ান্ত করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘কাল উইকেট কেমন থাকে সেটি দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। মাঠের অবস্থা, আবহাওয়া এবং পিচ—সবকিছুকে মাথায় রেখে আমরা চূড়ান্ত দল নির্বাচন করব।’
উল্লেখ্য, গল সাধারণত স্পিন সহায়ক উইকেট হিসেবেই পরিচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতের কারণে মাঠের কন্ডিশন অনেকটাই বদলে গেছে। উইকেট ভেজা থাকলে প্রথম দুই দিনে পেসাররাও কিছুটা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন বলে মনে করছেন কন্ডিশন পর্যবেক্ষকরা।
এই সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশ শুরু করছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র (২০২۵-২০২৭)। ফলে প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি পয়েন্ট, প্রতিটি সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর ঠিক এমন এক সময়েই দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার মেহেদী হাসান মিরাজকে ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়া দলের মনোবলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখযোগ্য যে, মিরাজ শুধু স্পিনার বা ব্যাটার নন, টিম ম্যানেজমেন্টের নির্ভরতার প্রতীক। কঠিন সময়, চাপের ম্যাচে বল হাতে উইকেট এবং ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলার নজির তার ক্যারিয়ারে বহুবার দেখা গেছে। সেই মিরাজ যদি এই টেস্টে না থাকেন, তাহলে কেবল টিম কম্বিনেশন নয়, বরং প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাও মানসিকভাবে সুবিধা পেতে পারে।
গল টেস্ট শুরু হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তার আগেই দলের এক বড় স্তম্ভের অসুস্থতা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। শেষ মুহূর্তে মিরাজ ফিট হয়ে মাঠে নামতে পারলে সেটি হবে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় স্বস্তির খবর। অন্যথায় কোচ-অধিনায়ককে নতুন কৌশল এবং বিকল্প খুঁজে নিতে হবে, যা শুরুতেই দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেবে। পুরো জাতি এখন অপেক্ষায়—মিরাজ কি পারবেন সময়ের আগেই ফিরতে?
বাংলাবার্তা/এমএইচ