
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে পুলিশের সাঁড়াশি বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় একযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ১ হাজার ৪৫২ জন। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩ জন মামলা ও আদালতের পরোয়ানাভুক্ত আসামি, আর বাকি ৩৯৯ জন বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন। এই অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ২টি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ১ রাউন্ড গুলি এবং ১টি বার্মিজ চাকু।
শনিবার (১৫ জুন) সকালে পুলিশের সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগরীতে পুলিশ একযোগে এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে চলবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, এই অভিযান মূলত পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ এবং বিচারিক প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, "অপরাধীরা যত বড়ই প্রভাবশালী হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জনগণের জানমাল রক্ষায় পুলিশের এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।"
এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায়ও শুক্রবার রাতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মোহাম্মদপুর থানা। ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) একেএম মেহেদী হাসান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই অভিযানে মোট ১১ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন— ৬ জন দ্রুত বিচার আইনের আওতায় অভিযুক্ত, ১ জন মাদক মামলার আসামি এবং ৪ জন আদালতের পরোয়ানাভুক্ত।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের এই অভিযান মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক, ছিনতাই, এবং অন্যান্য অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই আমরা নিয়মিত এমন অভিযান পরিচালনা করছি।”
দেশব্যাপী অভিযানে শুধু গ্রেফতারই নয়, অস্ত্র ও সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে: ২টি বিদেশি পিস্তল, ১টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ১ রাউন্ড গুলি, ১টি বার্মিজ ধারালো চাকু।
এসব অস্ত্র কোথা থেকে, কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা ও গোয়েন্দা সংস্থা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের এই অভিযান দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটি সক্রিয় কৌশলের অংশ। বিশেষ করে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন সরকার বেশ কড়া অবস্থান নিয়েছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্যই এই জাতীয় অভিযানের কার্যকারিতা বাড়ানো হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি নাগরিককে এই অভিযানে সহায়তা করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যে কোনো অপরাধ বা সন্দেহজনক তৎপরতা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। "আমরা চাই জনগণ আমাদের সহযোগী হোক। জননিরাপত্তা রক্ষায় সকলের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ," বলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
দেশব্যাপী পুলিশের এই বিশেষ অভিযান একটি সুসংগঠিত, পরিকল্পিত এবং দৃঢ় পদক্ষেপ যা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বার্তা দিচ্ছে— অপরাধ করে কেউ রেহাই পাবে না, আইন তার নিজস্ব গতিতেই চলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ