
ছবি: সংগৃহীত
মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ইসরাইলের ১০টি সামরিক বিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইরান। দেশটির সামরিক বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা মেহের নিউজ এজেন্সিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনাকে ইরান-ইসরাইল উত্তেজনার এক নতুন মাত্রা হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ইরানের খাতাম আল-আনবিয়া এয়ার ডিফেন্স বেসের কমান্ডার জানান, “গত এক ঘণ্টায় আমাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলের ১০টি সামরিক বিমান শনাক্ত করে সেগুলো সফলভাবে ভূপাতিত করেছে।” তিনি এ-ও বলেন, “আমরা আমাদের ভূখণ্ডের আকাশসীমা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুত। ইসরায়েলের যেকোনো আক্রমণের জবাব দেওয়া হবে দ্বিগুণ শক্তি দিয়ে।”
তবে ঠিক কী ধরনের বিমান ধ্বংস করা হয়েছে—তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি। ভূপাতিত হওয়া বিমানগুলো যুদ্ধবিমান, ড্রোন না কি নজরদারি বিমান—সে বিষয়েও বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ইসরায়েল থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই দাবি সত্য হলে তা হবে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে চলমান সংঘাতের এক চরম পরিণতি। ইরান-ইসরাইলের মধ্যকার উত্তেজনা গত কয়েক মাসে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে গাজায় যুদ্ধ, লেবাননে হিজবুল্লাহর সাথে সংঘর্ষ এবং ইরানের কুদস ফোর্সের নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে।
এই ঘটনার পর পরই ইরান একপ্রকার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সরাসরি ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামলা চালায়। ইরান সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবে তারা এই হামলা চালিয়েছে এবং “এটি শুধু শুরু”।
ইসরাইলের জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জানায়, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র হাইফা শহরের উপকণ্ঠে আঘাত হানে, যেখানে পাঁচজন আহত হন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানায় সংস্থাটি।
এদিকে গ্যালিলি এলাকার একটি আবাসিক ভবনে হামলার কারণে আরও ১৪ জন আহত হন। সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, একটি দোতলা ভবনে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানায় ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এবং ম্যাডিসিস নামক একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী দাবি করেছে, ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে ইরানি মিসাইল হামলায় একজন নিহত হয়েছেন। যদিও ইসরাইলি সরকার বা প্রতিরক্ষা বাহিনী এই তথ্য এখনও নিশ্চিত করেনি।
এই পুরো ঘটনার মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় আকারের যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মত দিয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি না এলেও, জাতিসংঘ মহাসচিব ইতোমধ্যে এক বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এমন সরাসরি সংঘাত বিরল হলেও ক্রমাগত বেড়ে চলা আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ পরিস্থিতিকে দিন দিন বিস্ফোরক করে তুলছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে দুপক্ষের যেকোনো একটুর ভুল সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলকে এক ভয়াবহ যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে। ফলস্বরূপ, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ