
ছবি: সংগৃহীত
ঈদ মানেই উৎসব। আর ঢালিউডের কাছে ঈদ মানেই নতুন সিনেমা, নতুন তারকার উত্থান, দর্শকদের ঢল, হাউজফুল প্রেক্ষাগৃহ, আর নতুন গল্প নিয়ে আগাম পরিকল্পনা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কুরবানি ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে ছয়টি নতুন সিনেমা—‘তাণ্ডব’, ‘ইনসাফ’, ‘টগর’, ‘উৎসব’, ‘নীলচক্র’ ও ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’। এর মধ্যে ঈদের দিন থেকেই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে উঠেছে দুটি সিনেমা— রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ এবং সঞ্জয় সমদ্দারের ‘ইনসাফ’।
এ দুই সিনেমায় প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন দুই জনপ্রিয় নাট্য অভিনেত্রী সাবিলা নূর ও তাসনিয়া ফারিণ। বলা যায়, নাটক ও ওটিটিতে বহুদিন অভিনয় দক্ষতায় দাগ রেখে এবার বড়পর্দায় এসে তারা বাজিমাত করেছেন।
প্রথম সিনেমাতেই সাবিলা ও ফারিণ নিজেদের দক্ষতা ও উপস্থিতি দিয়ে দর্শকের হৃদয় জয় করেছেন। দর্শকদের ব্যাপক আগ্রহ এবং নির্মাতাদের আগাম পরিকল্পনার প্রেক্ষিতে দুই সিনেমারই সিক্যুয়েল নির্মাণের ঘোষণা এসেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে—প্রথম কিস্তির মতো সিক্যুয়েলেও কি থাকছেন এই দুই জনপ্রিয় মুখ?
রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ সিনেমার মাধ্যমে শাকিব খানের বিপরীতে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে সাবিলা নূরের। ১৩২টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ঈদের দিন থেকেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। মূলত ঢাকাই সিনেমায় প্রথমবার এসেই সাবিলা নিজের অভিনয়, উপস্থিতি ও বাচনভঙ্গিতে নতুনত্ব এনেছেন।
সাবিলা বলেন, “এটা আমার প্রথম সিনেমা। সিনেমার প্রতি, বড় পর্দার প্রতি সবকিছুতেই আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। শুরুতে ভীষণ নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু দর্শকের ভালোবাসা দেখে এখন মনে হচ্ছে আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান।"
পরিচালক রাফী বলেন, “সাবিলার ওপর আমার ভরসা ছিল। সে সেটা কাজে লাগিয়েছে। দর্শকরা তাকে নায়িকা হিসেবেও গ্রহণ করেছে। এটা আমার জন্য আনন্দের।”
এই সিনেমায় ক্যামিও চরিত্রে হাজির হয়েছেন সিয়াম আহমেদ ও আফরান নিশো। মাত্র কয়েক মিনিটের উপস্থিতি থাকলেও, এই দুই তারকার ঝলকে সিনেমাটির গ্রহণযোগ্যতা ও আকর্ষণ আরও বেড়ে গেছে। ফলে সিনেমা শেষ হওয়ার পরপরই যখন পর্দায় সিক্যুয়ালের ঘোষণা ভেসে ওঠে, তখন থেকেই দর্শকের কৌতূহল—‘তাণ্ডব ২’-তেও কি সাবিলা, সিয়াম ও নিশো থাকছেন?
নির্মাতা রায়হান রাফী সিক্যুয়ালের বিষয়ে বলেন, “তাণ্ডব-২ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি ইউনিভার্স হতে যাচ্ছে। আমরা যেমন মার্ভেল বা বলিউডের সিনেমায় নির্দিষ্ট ঘরানার উপর ভিত্তি করে একাধিক সিনেমা দেখি, তেমনই কিছু ভাবছি। সময়মতো বিস্তারিত জানাব।”
তাসনিয়া ফারিণ এর আগেও সিনেমায় অভিনয় করেছেন, তবে এবারের ‘ইনসাফ’ ছিল তার প্রথম বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা। অ্যাকশন-থ্রিলার ঘরানার এ সিনেমায় শরিফুল রাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে হাজির হন ফারিণ। এতে একদমই গতানুগতিক নায়িকার চেয়ে আলাদা এক রূপে দেখা গেছে তাকে। সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ একটি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম এবং ক্যামিও চরিত্রে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী।
সিনেমাটি ঈদের দিন থেকে সিনেপ্লেক্সসহ ১৬টি প্রেক্ষাগৃহে চলতে থাকে। দর্শক সাড়া ও প্রশংসায় ফারিণ কার্যত ঝড় তুলেছেন। অনেকেই বলছেন, এ সিনেমার পর থেকেই তাকে ‘ফুল-টাইম সিনেমার নায়িকা’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
নির্মাতা সঞ্জয় সমদ্দার বলেন, “ফারিণ হচ্ছেন চরিত্রনির্ভর অভিনয়ের একজন শক্তিশালী শিল্পী। ইনসাফে তিনি যেভাবে নিজেকে ভেঙেছেন, সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। চরিত্রটির জন্য তিনি গভীর প্রস্তুতি নিয়েছেন। তার পারফরম্যান্স এক কথায় অসাধারণ।”
ফারিণ বলেন, “আমি সবসময়ই নিজেকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে উপস্থাপন করতে চাই। এখন আমার একমাত্র মনোযোগ সিনেমা। ইনসাফের জন্য আমি ভিন্নধর্মী একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম। দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
সিনেমা শেষ হতেই দর্শকের একটাই প্রশ্ন—সিক্যুয়ালে সাবিলা ও ফারিণ থাকছেন কি না?
রায়হান রাফী বলেছেন, “তাণ্ডব-২ হবে আরও বিস্তৃত। যারা তাণ্ডবের প্রথম কিস্তি দেখেছেন তারা বুঝেছেন, আমরা একটি সিনেমাটিক ইউনিভার্স তৈরির দিকে এগোচ্ছি।”
একইভাবে সঞ্জয় সমদ্দার জানিয়েছেন, “ইনসাফ-২ আরও বড় পরিসরে নির্মাণ করব। তাই প্রথম সিনেমাতেই কিছু বিশেষ চরিত্রকে আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে চঞ্চল চৌধুরীর ছোট উপস্থিতিও একটা পরিকল্পনার অংশ।”
তবে দুই নির্মাতাই সাবিলা ও ফারিণকে সিক্যুয়েলে রাখার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও, তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে এ দুই অভিনেত্রী ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিবেচনায় রয়েছেন।
সাবিলা নূর ও তাসনিয়া ফারিণ—দুজনেই একসময় টিভি নাটকে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ। পরে ওটিটিতে সফলভাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন। এবার তারা বড়পর্দায়ও দর্শকের মন জয় করছেন। তাদের আত্মপ্রকাশ শুধুই ঈদের উৎসব নয়, বরং একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
দর্শকদের ভালোবাসা, নির্মাতার আস্থা এবং নতুন সিনেমার পরিকল্পনায় স্পষ্ট—ঢাকাই সিনেমার পরবর্তী নায়িকা জেনারেশনে তাদের উপস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে।
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’ দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি প্রমাণ করেছে, ঢালিউডে তাজা মুখের দরকার আছে, যারা নিজেদের সাবলীল অভিনয়, ভিন্ন লুক ও প্রগতিশীল চিন্তাভাবনায় পর্দায় আনতে পারেন নতুন মাত্রা। সাবিলা ও ফারিণ তা করে দেখিয়েছেন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—সিক্যুয়ালে তারা থাকছেন কি না, আর থাকলে কেমন চমক নিয়ে ফিরে আসছেন!
বাংলাবার্তা/এমএইচ