
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতিতে এক ধরনের ইতিবাচক মোড় দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গ্রস রিজার্ভ আবারও ২৬ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, ১৬ জুন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৬০৬ কোটি ডলার। একই সময়ে নিট রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা ২ হাজার ৭৭ কোটি ডলারের সমান।
এই রিজার্ভ বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে তিনটি উল্লেখযোগ্য কারণ:
১. রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক গতি: ঈদুল আজহার আগে প্রবাসীরা বেশি হারে রেমিট্যান্স পাঠানোয় জুন মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, জুনের প্রথম ১৩ দিনেই এসেছে প্রায় ৯৫ কোটি ডলার।
২. রপ্তানি আয় বেড়ে যাওয়া: পোশাক খাতসহ কয়েকটি খাতের রপ্তানি আবার ঘুরে দাঁড়ানোয় জুন মাসের প্রথমার্ধে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক আয় দেশে এসেছে।
৩. বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়: সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ২৫ কোটি ডলার ঋণ ছাড় হয়েছে। এটি সরাসরি রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে।
গত মে মাসের শুরুতে বাংলাদেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (ACU) মাধ্যমে সদস্য দেশগুলোর বকেয়া পরিশোধ করেছিল। ওই সময় একবারে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধের কারণে গ্রস রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। নিট রিজার্ভ তখন ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে এসেছিল, যা ছিল গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর।
তবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে আবারও গ্রস রিজার্ভ ২৬ বিলিয়ন এবং নিট রিজার্ভ প্রায় ২১ বিলিয়নের কাছাকাছি উঠে এসেছে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধি যে শুধু পরিসংখ্যানগত অর্জন তা নয়, এর প্রতিক্রিয়াও অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে দেখা যাচ্ছে।
ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। ২০২৪ সালের মাঝামাঝি থেকে ডলারের বাজার-নির্ধারিত দাম চালু করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ বাড়ায় বাজারে অস্থিরতা দেখা যায়নি।
মূল্যস্ফীতির উপর প্রভাব: রিজার্ভ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানি ব্যয় মেটাতে ডলার সরবরাহ বাড়াতে পারবে, যা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক: উচ্চ রিজার্ভ আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “রিজার্ভে এই ঊর্ধ্বগতি স্বল্পমেয়াদে ইতিবাচক সঙ্কেত। তবে আমাদের এখনই আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। মূল কথা হলো—রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই করে গড়ে তোলা।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, “এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একটি লক্ষণ। তবে আমদানি খরচ ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপের দিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ