
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে নতুন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হিসেবে নেপাল থেকে সরাসরি ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে এবং এটি জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই উদ্যোগ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে এবং বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে শক্তির নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রোববার (১৫ জুন) রাতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, ১৪ জুন দিনগত রাত ১২টার পর থেকে বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ গ্রহণ শুরু করেছে। এই প্রথমবারের মতো নেপাল থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে বৈচিত্র্য এসেছে।
তিনি জানান, ১৫ জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসের জন্য নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। নেপালে বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে, যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযোগী সময়, তাই এই সময়টিতে বিশেষ করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
বিদ্যুৎ আমদানির পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভারতের মধ্যকার একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। গত ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যবসা নিগম লিমিটেডের মধ্যে এই ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, ১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে দেশকে শক্তি নিরাপত্তায় আরও দৃঢ়তা আনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি এই উদ্যোগকে বাংলাদেশের শক্তি খাতের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।
নেপাল থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট প্রায় ৭ টাকা নির্ধারিত হয়েছে, যা ভারতীয় ট্রান্সমিশন চার্জসহ প্রযোজ্য। যদিও এ দাম বিদ্যুৎ সরবরাহের বাজারদরের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস থেকে শক্তি আনার মাধ্যমে দেশের পরিবেশ বান্ধব শক্তি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখছে।
বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও বিদ্যুৎ সংকট প্রবণ অঞ্চলে এ উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নেপাল থেকে আসা জলবিদ্যুৎ এ লক্ষ্য পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জলবিদ্যুৎ, প্যানেল ও বায়ু বিদ্যুৎসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের শক্তি খাতকে আরও পরিবেশবান্ধব ও টেকসই করার পরিকল্পনা রয়েছে।
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির এই উদ্যোগ সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে নতুন বিকল্প তৈরি হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবসায় সহযোগিতা বৃদ্ধির নতুন দরজা খুলে যাবে।
এছাড়া, এ উদ্যোগে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং শক্তি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে নেপাল থেকে সরাসরি ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হওয়া দেশের শক্তি নিরাপত্তার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে নেপাল ও ভারতের সহযোগিতায় এই বিদ্যুৎ সরবরাহ আগামী পাঁচ মাস অব্যাহত থাকবে। এটি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। আগামীতে এ ধরনের সহযোগিতা শক্তি খাতের বিকাশ ও উন্নয়নে এক নতুন অধ্যায় রচনা করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ