
ছবি: সংগৃহীত
১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার দেশব্যাপী সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টার একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে, যা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন, তৎকালীন বাকশাল সরকার ৪টি সরকারি নিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র ছাড়া দেশের সব কাগজের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। এই সিদ্ধান্ত ছিল দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে পুরোপুরি ধ্বংস করার একটি নগ্ন প্রচেষ্টা। এতে হাজার হাজার সাংবাদিক, কলাকুশলী এবং পত্রিকার কর্মচারীরা কর্মহীন হয়ে পড়েন এবং চরম দারিদ্র্য ও মানবেতর অবস্থার মুখোমুখি হন। সেই দিনটি সংবাদপত্রের ইতিহাসে ‘কালো দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
বিবৃতিতে অধ্যাপক পরওয়ার আরও বলেন, একই ধাঁচের দমননীতি আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই আবারও কার্যকর করে। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে একের পর এক সংবাদমাধ্যম—দৈনিক আমার দেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবি এবং অনেক অনলাইন পোর্টাল—বন্ধ করে দেয়। এতে হাজার হাজার সংবাদকর্মী জীবিকা হারান, পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেন।
তিনি বিশেষভাবে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনের কথাও উল্লেখ করেন। জামায়াতের মতে, এই আইনগুলো সরকারের একচেটিয়া ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারে গুরুতর হস্তক্ষেপ করেছে। অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, “এই আইনের কারণে বহু নিরপরাধ সাংবাদিক ও চিন্তাশীল মানুষকে বছরের পর বছর জেলে আটক রাখা হয়েছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার কোনো কর্ণপাত করেনি, বরং এই কালাকানুনকে আরও শক্তিশালী করে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করেছে।
তবে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। যেমন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ থেকে কিছু ধারা বাতিল করা হয়েছে, এবং পূর্বে বন্ধ হয়ে যাওয়া কিছু সংবাদমাধ্যমের (যেমন: আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইত্যাদি) সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আধুনিক বিশ্বে সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এই স্তম্ভকে দুর্বল করে দিলে গণতন্ত্র টিকতে পারে না।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সংবাদকর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন এবং সমাজে সত্য প্রকাশে নির্ভীক ভূমিকা রাখবেন।
বিবৃতির শেষভাগে জামায়াত নেতা বলেন, “ভবিষ্যতে জনগণ যদি আমাদের ক্ষমতায় আনেন, তবে ইনশাআল্লাহ আমরা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবো এবং তাদের স্বার্থরক্ষায় দৃঢ়ভাবে কাজ করবো।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ