
ছবি: সংগৃহীত
কোরবানির ঈদের জমজমাট উৎসবে দেশীয় সিনেমার বাজারে যেসব সিনেমা আলোড়ন তুলেছে, তার মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে সাদিয়া আয়মান অভিনীত ‘উৎসব’। নাট্যাঙ্গনে বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচিত নাম সাদিয়া আয়মান এবার সিনেমার জগতে নতুন পরিচিতি গড়ছেন। ঈদের ‘নায়িকা’ হিসেবে বড় পর্দায় হাজির হওয়া এই তারকার জন্য ‘উৎসব’ তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র হলেও দর্শকপ্রিয়তায় এর অভিঘাত যেন বহু অভিজ্ঞ অভিনেত্রীকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
ঈদের দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে ‘উৎসব’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার, যমুনা ব্লু-রেতে শো শুরু থেকেই দর্শকে ঠাসা। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে এই আগ্রহ এতটাই বেড়েছে যে, অনেক মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত শো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
সিনেমাটির নির্মাণ, গল্প এবং অভিনয়—এই তিন উপাদানের মেলবন্ধন দর্শকদের মধ্যে যেন এক নতুন অভিজ্ঞতার অনুভব সৃষ্টি করছে। পরিচালক তানিম নূর জানিয়েছেন, ‘উৎসব’ মূলত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সের বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস “A Christmas Carol” থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে। তবে গল্পটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রেক্ষাপটে রূপান্তর করা হয়েছে, যাতে বাঙালি দর্শকের জন্য এক অনন্য সংস্করণ দাঁড়ায়।
গল্পে দেখা যায় এক ধনাঢ্য কিন্তু আত্মকেন্দ্রিক ও কৃপণ ব্যবসায়ীকে ঘিরে এক রহস্যময় রাতের ঘটনা। সে রাতে হঠাৎ করেই তার জীবনে হাজির হয় তার তিন মৃত ব্যবসায়িক অংশীদারের আত্মা, যারা তাকে তার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের আয়না দেখাতে নিয়ে যায়। আত্মজিজ্ঞাসা, মানবিকতা এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ কী—সেই প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্রে রেখেই এগিয়েছে কাহিনি। এ এক ভিন্নধর্মী মানবিক চলচ্চিত্র, যা বিনোদনের পাশাপাশি দর্শককে ভাবতেও বাধ্য করে।
এই সিনেমার অন্যতম চমক হলো জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসানের ভূতের চরিত্রে অভিনয়। খুবই শক্তিশালী এবং অভিনয়নির্ভর চরিত্রে তার উপস্থিতি প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের কাছ থেকেও। তার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, জয়া আহসান, অপি করিম, তারিক আনাম খান, ইন্তেখাব দিনার, সৌম্য জ্যোতি এবং সাদিয়া আয়মান নিজে। অভিনয়জগতের একঝাঁক দক্ষ শিল্পী যেন একত্রিত হয়েছেন এই ছবির মাধ্যমে।
সিনেমাটি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাদিয়া আয়মান বলেন,
“আমি দর্শকদের সঙ্গে বসে সিনেমাটি উপভোগ করেছি। এই অনুভূতিকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তারা আমার অভিনয়কে ভালোবেসেছেন, প্রশংসা করেছেন। এটি আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার অভিনয়জীবনের অন্যতম প্রেরণা হয়ে থাকবে এই প্রতিক্রিয়া।”
দেশে অভাবনীয় সাফল্যের পর এবার ‘উৎসব’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। জানা গেছে, আগামী ২০ জুন থেকে সিনেমাটি প্রদর্শিত হবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বিখ্যাত প্রেক্ষাগৃহগুলোতে। কানাডার ‘সিনেপ্লেক্স’, আমেরিকার ‘এএমসি’, ‘রিগ্যাল’, ‘সিনেমার্ক’ এবং যুক্তরাজ্যের ‘সিনেওয়ার্ল্ড’—এই নামগুলো শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যই নয়, বিশ্বব্যাপী সিনেমাপ্রেমীদের কাছেও পরিচিত। সিনেমাটির আন্তর্জাতিক পরিবেশনার দায়িত্বে রয়েছে ‘স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও ২১ জুন থেকে ‘উৎসব’ মুক্তি পাবে অস্ট্রেলিয়াতেও। সেখানে প্রবাসী বাঙালিদের জন্য বিশেষ শোয়ের আয়োজন করা হচ্ছে সিডনি, মেলবোর্ন, পার্থ ও ব্রিসবেনে। ফলে এই ঈদে শুধু দেশের দর্শকই নয়, বিদেশের মাটিতেও সাদিয়া আয়মানের অভিনয় প্রতিভার সাক্ষী হতে যাচ্ছেন হাজারো প্রবাসী।
প্রসঙ্গত, ‘উৎসব’ সাদিয়ার দ্বিতীয় সিনেমা হলেও প্রথম সিনেমা ‘কাজলরেখা’ দিয়েই তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। সেসময় নাটকের পরিচিত মুখ হলেও সিনেমায় তার অভিনয় দক্ষতা অনেকে আবিষ্কার করেছিলেন নতুনভাবে। এবার ‘উৎসব’-এ সেই সম্ভাবনা যেন পূর্ণতা পাচ্ছে।
এদিকে ঈদে ‘উৎসব’-এর পাশাপাশি ওটিটিতেও দর্শকদের মন জয় করেছেন সাদিয়া। জনপ্রিয় নির্মাতা অমিতাভ রেজার ওয়েব সিরিজ ‘বোহেমিয়ান ঘোড়া’-তে তিনি অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিমের স্ত্রীর চরিত্রে। এই সিরিজেও তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা চলে, এবারের কোরবানির ঈদে বড় পর্দা থেকে ওটিটি—সব জায়গাতেই সাদিয়া আয়মান ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ‘উৎসব’ আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেলে এই সাফল্য আরও বহুদূর ছড়িয়ে পড়বে বলেই আশা করছেন সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ