
ছবি: সংগৃহীত
দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১৮ জনের শরীরে নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে মঙ্গলবার (১৮ জুন) পাঠানো করোনা সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, এক দিনে ৩১২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। সে হিসেবে একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা আগের দিনের তুলনায় খানিকটা বেশি।
এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৬ জনে। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫০৬ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ। সেদিন প্রথমবারের মতো তিনজন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। এরপর দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। করোনায় দেশে প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৮ মার্চ, মাত্র ১০ দিনের মাথায়।
এরপর একসময় সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট, এ দুদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়। ওই বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটে দেশজুড়ে মৃত্যু ও সংক্রমণের ভয়াল রূপ দেখা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। তবে বর্তমানে শনাক্তের হার কিছুটা কমে এলেও এটি ৫ শতাংশের বেশি, যা সতর্ক সংকেত হিসেবেই ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে করোনার যে রূপ পাওয়া যাচ্ছে, তা তুলনামূলকভাবে মৃদু হলেও তা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কারণ, সংক্রমণ ছড়ানোর গতি আগের মতোই থেকে গেছে, তবে উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গে অনেকেই তা শনাক্ত করছেন না বা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।
তারা আরও বলছেন, জনসচেতনতা কমে যাওয়ার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে, বিশেষ করে গণপরিবহন, মার্কেট এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, ওমিক্রনের উপধরন এখনও বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করছে, তবে তার ভেতরে আরও ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি তুলনামূলক বেশি সংক্রামক। যদিও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বড় আকারে নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব ধরা পড়েনি, তবে সতর্কতা জারি রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা এখনো করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নেননি, তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিক, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে টিকা অত্যন্ত জরুরি।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে নতুন করে হাসপাতাল ও পরীক্ষাগারে প্রস্তুতি জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক বিবৃতিতে জানান, বর্তমান পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আইসোলেশন ওয়ার্ড, অক্সিজেন সরবরাহ, ওষুধ মজুদ এবং চিকিৎসা কর্মীদের প্রস্তুতি পুনরায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষাকাল এবং ঈদ পরবর্তী সময়ে মানুষজনের ঘনঘন চলাফেরা এবং ভ্রমণের কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সময়টাতে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সংক্রমণ তরতরিয়ে বেড়ে যেতে পারে।
তাই তারা সকলকে অনুরোধ করেছেন— অসুস্থ বোধ করলে অবিলম্বে পরীক্ষা করানো, বাসা ও অফিসে নিয়মিত জীবাণুনাশক ব্যবহার, ভিড়ের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলার জন্য।
এক সময় ভয়াবহ মহামারি হিসেবে দেশ-বিদেশে থাবা বসানো করোনাভাইরাস এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এলেও, তাতে আত্মতুষ্টির কোনো জায়গা নেই—এটাই বারবার বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে যে কয়েক ডজন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, তার বাইরে আরও কয়েকগুণ বেশি মানুষ হয়তো আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করাচ্ছেন না।
এমন বাস্তবতায়, সবাইকে ব্যক্তিগত সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং টিকা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা এখন সময়ের দাবি।
করোনা এখনো আছে, হয়তো ছদ্মবেশে—তাই সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ