
ছবি: সংগৃহীত
চলতি মাসে দেশের বাজারে তিন ধরনের নতুন নোট আনা হয়েছে, যেগুলোতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক, প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতীক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নতুন নোট সংগ্রহে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ব্যাপক হওয়ায় অনেকে এগুলো সংগ্রহ করছেন খোলা বাজার থেকে অতিরিক্ত দামে। কিন্তু ব্যাবহারিক দিক থেকে এই নতুন নোট নিয়ে সাধারণ মানুষ বড় ধরনের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিশেষ করে এটিএম বুথ, ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) ও মেট্রো রেলের টিকিট বুথগুলোতে এই নোট গ্রহণ না করার অভিযোগ প্রবল হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, এক ব্যক্তি হাতে নতুন এক হাজার টাকার নোট নিয়ে দোকানে যাওয়ার পর দোকানদার টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। অন্যদিকে নতুন নোট সংগ্রহকারী কেউ বলছেন, একাধিক দোকানে গিয়ে বোঝানোর পরেও কেউ নতুন নোট গ্রহণ করতে আগ্রহী হননি। একইভাবে একটি এটিএম বুথে নতুন নোট জমা দেওয়ার চেষ্টা হলেও মেশিন সেটি গ্রহণ করেনি, যা গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ঈদুল আজহার সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকার নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংককে নতুন নোট সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে নতুন নোট এখনো পুরোপুরি এটিএম সিস্টেমে স্বীকৃতি পায়নি। ফলে নগদ লেনদেন বিশেষ করে বুথ ও অটোমেটেড টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহ আলম পাটোয়ারী জানান, নতুন এক হাজার টাকার নোট গ্রহণ না করার অভিযোগ আসছে কারণ এটিএম বুথের সফটওয়্যার সিস্টেমে নতুন নোটের তথ্য এখনো যুক্ত হয়নি। এতে সফটওয়্যার আপডেট ও সিকিউরিটি কনফিগারেশন সম্পন্ন করতে কিছু সময় লাগছে। তবে আপডেটের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এবং খুব শিগগিরই এটি সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ঈদের ছুটিতে দেশের ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা এটিএম বুথে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা মজুদ রাখে এবং গ্রাহকরা নির্বিঘ্নে লেনদেন করতে পারেন। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে এবং পর্যাপ্ত টাকা না রাখে বা সময়মতো রিফিল না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ গ্রাহকদের হয়রানি সহ্য করা হবে না।
দেশজুড়ে বর্তমানে প্রায় ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে। এগুলোতে নিয়মিত টাকা জমা রাখতে হয়। বিশেষ করে ঈদের মতো সময়ে এই সিআরএমগুলোতে এটিএমের মতোই টাকা জমা দিতে হয় কারণ তখন নগদ উত্তোলন বেড়ে যায়। ব্যাংকগুলো এটিএম বুথে টাকা জমা দেয় দুই পদ্ধতিতে — শাখার নিকটবর্তী বুথগুলোতে শাখার কর্মকর্তারা সরাসরি জমা করেন, আর দূরে থাকা বুথগুলোতে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন নোট গ্রহণে সমস্যা মূলত প্রযুক্তিগত দিক থেকে হওয়া সফটওয়্যার আপডেটের দেরি এবং বুথ ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের অভাবের জন্য। তদুপরি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির অভাবও এই বিড়ম্বনা বাড়িয়ে তুলেছে। বুথ অপারেটরদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নে মনোযোগ দিলে এ ধরনের সমস্যা অনেকাংশেই কমে আসতে পারে।
গত ঈদুল আজহার সময়ও গ্রাহকদের এটিএম বুথে নগদ পাওয়ার জন্য ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। টাকা শেষ হয়ে গেলে দ্রুত রিফিল না হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেউ কেউ ছয়-সাতটি বুথ ঘুরেও যথেষ্ট নগদ পাচ্ছেন না। অথচ এটিএম বুথে ২৪ ঘণ্টা টাকা জমা ও উত্তোলনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এসব বুথ কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেনি।
নতুন নোট বাজারে আনার পেছনে দেশীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস তুলে ধরার মহৎ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও প্রাথমিক পর্যায়ে এর ব্যবহারিক গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে বেশকিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। দ্রুত সফটওয়্যার আপডেট, বুথ ব্যবস্থাপনা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই বিড়ম্বনা দূর করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজ দ্রুততর করা দরকার। নগদ লেনদেনের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে এই নতুন নোটের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ