
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই সিনেমার সাম্প্রতিক আলোচিত চলচ্চিত্র ‘তাণ্ডব’-এর মধ্য দিয়ে ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ সাবিলা নূর বড় পর্দায় যাত্রা শুরু করেছেন। ঈদুল আজহায় মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটি শুধু বক্স অফিসে নয়, মন জয় করেছে দর্শক ও সমালোচকদের। তবে তারকাদের মধ্যে এক রহস্য থেকে যাচ্ছিল—অন্য আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী কেন এতদিন সিনেমাটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি? সাবিলা ও মেহজাবীন দুজনেই ব্যক্তিজীবনে বেশ ঘনিষ্ঠ, আবার পেশাগতভাবেও দুইজনই ছিলেন টেলিভিশন নাটকের শীর্ষ অভিনেত্রী।
শেষ পর্যন্ত সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি মেহজাবীন মুখ খুলেছেন ‘তাণ্ডব’ নিয়ে—আর তার প্রতিটি কথায় যেন উপচে পড়ছে গর্ব, ভালোবাসা আর মুগ্ধতা।
নববিবাহিত মেহজাবীন চৌধুরী ঈদের সময় ছিলেন ফ্রান্সে হানিমুনে। সেই কারণেই ঈদের দিন বা তার আশেপাশে সিনেমা দেখার সুযোগ পাননি তিনি। যদিও অনেকেই তার নীরবতা নিয়ে নানা গুঞ্জনে মুখর ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, তবে তা ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনি। দেশে ফেরার পরই সাবিলা নূরের সঙ্গে একসঙ্গে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ‘তাণ্ডব’ দেখেন মেহজাবীন। শাকিব খান ও সাবিলা অভিনীত একটি গানের দৃশ্যের ভিডিও ক্লিপ ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে শেয়ার করে জানান দিয়েছেন সে মুহূর্তের কথা।
শুধু সিনেমা দেখা নয়, সাবিলার অভিনয় নিয়ে আবেগময় মন্তব্য করে মেহজাবীন বলেন, “বড় পর্দায় সাবিলাকে দেখছি! এত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা চরিত্র, এত পবিত্র, এত নিষ্পাপ। সে সত্যিই সৌন্দর্য এবং মনোমুগ্ধকর মনোভাব দিয়ে চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছে।”
এই মন্তব্যে স্পষ্ট—বন্ধু ও সহকর্মী হিসেবে সাবিলার বড় পর্দার অভিষেককে মেহজাবীন কতটা আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন।
সাবিলা নূর, যিনি প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় অভিনয় করলেন ঢাকাই ছবির রাজপুত্র শাকিব খানের বিপরীতে, এই মন্তব্যে আপ্লুত হয়ে ওঠেন। মেহজাবীনের মতো একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর কাছ থেকে এমন উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পাওয়া যে কোনো নবাগতার জন্যই বড় প্রাপ্তি।
সাবিলা বলেন, “মেহজাবীনের মন্তব্য আমার কাছে আশীর্বাদের মতো। আমরা দুজনেই অভিনয়জগতে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি। ওর এমন ভালোবাসা আমার আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
রায়হান রাফি পরিচালিত ‘তাণ্ডব’ মুক্তির পর থেকেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রথম সপ্তাহেই দেশের প্রায় সবগুলো প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। এরপর দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিভিন্ন দেশে—যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে।
যদিও পাইরেসির শিকার হয়েছে ‘তাণ্ডব’, তবুও দর্শকের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। দেশে এমনকি যেসব এলাকায় স্থায়ী প্রেক্ষাগৃহ নেই, সেখানে অস্থায়ীভাবে সিনেমা হল বসিয়ে প্রদর্শন চলছে। সাধারণ দর্শক এবং সিনেমা প্রেমীদের বিপুল সাড়া চলচ্চিত্রটির সাফল্যের প্রমাণ দিচ্ছে।
‘তাণ্ডব’ সিনেমাটি সাবিলা নূরের জন্য ছিল অগ্নিপরীক্ষার মতো। নাটকে সফল এই অভিনেত্রী চলচ্চিত্রে কতটা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন, তা নিয়ে ছিল জোর আলোচনা। তবে মুক্তির পরপরই চলচ্চিত্রবোদ্ধারা বলছেন, সাবিলা শুধু ভালো অভিনয়ই করেননি, বরং বড় পর্দার উপস্থিতিতেও তিনি অনন্য হয়ে উঠেছেন।
শাকিব খানের বিপরীতে তার সাবলীল অভিনয়, সংলাপ বলার ভঙ্গি, চোখের অভিব্যক্তি এবং চরিত্রের প্রতি নিষ্ঠা—সব কিছুই যেন মুগ্ধ করেছে দর্শক ও সমালোচক উভয়কে।
সিনেমাটিতে শাকিব-সাবিলা ছাড়াও অভিনয় করেছেন দেশের প্রথম সারির একঝাঁক তারকা। জয়া আহসান, আফজাল হোসেন, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকী, গাজী রাকায়েত, ডা. এজাজ, এফএস নাঈম, ফজলুর রহমান বাবুসহ অনেকেই এই সিনেমায় ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে গল্পকে করেছেন বহুমাত্রিক।
সাবিলা নূরের বড় পর্দায় অভিষেক, মেহজাবীনের উষ্ণ প্রশংসা এবং দর্শকের অফুরন্ত ভালোবাসা—সব মিলিয়ে ‘তাণ্ডব’ এখন ঢালিউডে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বন্ধুত্ব, প্রতিযোগিতা ও শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা—এই তিনটি গুণের এক অসাধারণ সমন্বয় দেখা গেল মেহজাবীন ও সাবিলার এই মুহূর্তে। এটা শুধু দুজন শিল্পীর সম্মান বিনিময় নয়, বরং একটি সুস্থ ও সহমর্মী শিল্পাঙ্গনের পরিচায়কও বটে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ