
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই সিনেমার দুই জনপ্রিয় নায়িকা অপু বিশ্বাস ও শবনম বুবলীর মধ্যে চলমান মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন প্রকাশ্যে এসেছে, বিশেষ করে চিত্রনায়ক শাকিব খানকে কেন্দ্র করে। শাকিবের সঙ্গে উভয়েরই অতীত সম্পর্ক এবং উভয়েরই সন্তানের মা হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই দুজনের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাম্প্রতিক বাবা দিবসকে কেন্দ্র করেও এমন ঘটনা ঘটে।
সেই প্রসঙ্গেই এবার মুখ খুলেছেন অপু বিশ্বাস। রোববার (১৫ জুন) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, তিনি কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতার অংশ হতে চান না। তিনি জানান, সামাজিক মাধ্যমে নিজের এবং সন্তানের কিছু ব্যক্তিগত মুহূর্ত শেয়ার করলেই সেটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ‘অপ্রয়োজনীয় পাল্টাপাল্টি প্রতিযোগিতা’। তিনি এসব নিয়ে বিরক্ত এবং ক্লান্ত।
অপু বিশ্বাস লেখেন, “প্রিয় ভক্ত-অনুরাগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা, সম্প্রতি লক্ষ্য করছি, আমার ব্যক্তিগত কিছু মুহূর্ত বা আমার ছেলের সঙ্গে স্মরণীয় সময়গুলো যখন আমি আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করি—তখনই কোনো না কোনোভাবে সেই বিষয়কে ঘিরে এক ধরণের অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।”
তিনি বলেন, “আমি একজন মা, একজন অভিনেত্রী, একজন উদ্যোক্তা। ক্যামেরার বাইরে আমার জীবনটা একজন নারীর মতোই—হাজারো কাজ, পরিকল্পনা, স্বপ্ন, দায়িত্ব, ব্যস্ততা ও বাস্তবতা নিয়ে গড়ে উঠেছে। আমি কাউকে কিছু প্রমাণ করতে চাই না। আমার জীবন ও সম্পর্কের অনেক অধ্যায় মানুষের সামনে কেটেছে, সেখানে কোনো লুকোচুরি বা নাটক ছিল না। আমি আমার ছেলের জন্য সময় দেই, তার মানসিক বিকাশ ও সুন্দর শৈশব নিশ্চিত করতে চেষ্টা করি। এই কাজকে কেন্দ্র করে যদি কারও মধ্যে ‘অস্বস্তি’ তৈরি হয়, তাহলে আমি দুঃখিত, তবে এর দায় আমার নয়।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যেন পরোক্ষভাবে বুবলীকে ইঙ্গিত করছেন। কারণ গত কয়েক বছর ধরেই এই দুই অভিনেত্রীর সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেওয়া, মন্তব্য করা এবং পরবর্তীতে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার বিষয়গুলো ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, একজন যখন সন্তানের সঙ্গে কোনো ছবি বা ভিডিও পোস্ট করেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্যজনও ঠিক একই রকম কোনো স্ট্যাটাস বা ছবি দেন। এই ‘সামাজিক মিডিয়া প্রতিযোগিতা’ নিয়েই অপু এবার মুখ খুললেন।
তিনি বলেন, “আমি অনেকদিন ধরেই দেখছি, আমার কোনো সাধারণ পারিবারিক পোস্টের পরেই যেন কিছু ‘কাউন্টার প্রচেষ্টা’ শুরু হয়। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই—আমি সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেই। আমি নিজে যা করি, সেটা ভালোবাসা ও আন্তরিকতা থেকে করি, কোনো হিসাব-নিকাশ করে বা কাউকে দেখানোর জন্য নয়। সম্মান নিজে অর্জন করতে হয়, অন্যকে ছোট করে নয়।”
এই পোস্টের মাধ্যমে অপু বিশ্বাস যেন নিজের অবস্থান একরকম ‘পরিষ্কার’ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এখন থেকে আমি শুধু নিজের কাজ, নিজের ছেলে, নিজের ভক্তদের সময় দিতে চাই। কারো সাথে পাল্লা দেওয়ার জন্য আমি এখানে আসিনি। আমি নিজের জায়গাতেই স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। যারা আমাকে ভালোবাসেন, পাশে থাকেন—আপনাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি আপনাদের বিশ্বাস ভাঙতে চাই না। আর নিজের ব্যক্তিত্ব নষ্ট করে কারো সঙ্গে পা মেলাতে রাজিও নই। ভালোবাসা অমলান থাকুক।”
অপু বিশ্বাসের এই পোস্ট ঘিরে ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার পোস্টে দেড় লাখের বেশি রিয়্যাকশন পড়েছে, কমেন্ট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২০ হাজার, আর শেয়ার হয়েছে এক হাজারেরও বেশি। নেটিজেনদের অনেকেই তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, “অপু বিশ্বাস এই প্রজন্মের সাহসী নারী, যিনি তার জীবন নিজের মতো করে বেছে নিয়েছেন।”
তবে সমালোচনাও কম হয়নি। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, “যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় না থাকেন, তাহলে এসব ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন হলো কেন?” কেউ কেউ আবার উভয় পক্ষকে বলছেন “নিজ নিজ পথ নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য।”
উল্লেখ্য, অপু বিশ্বাস ও শাকিব খানের বিয়ে হয়েছিল ২০০৮ সালে, যা ২০১৭ সালে অপু টেলিভিশনে এসে প্রকাশ করেন। তাঁদের সন্তান আব্রাম খান জয় তখন প্রকাশ্যে আসে প্রথমবারের মতো। এরপরই শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তীতে শাকিবের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে চিত্রনায়িকা বুবলীর। তাঁর গর্ভেও আসে এক সন্তান—শেহজাদ খান বীর। এই দুই সন্তান, দুই মা এবং একজন কেন্দ্রীয় নায়ক—এই ত্রিভুজ সম্পর্ক ঘিরেই প্রায়শ উত্তেজনা ও ব্যক্তিগত কটাক্ষমূলক পোস্ট দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে।
অপু বিশ্বাসের এই পোস্টকে অনেকেই দেখছেন একজন মা ও শিল্পীর পক্ষ থেকে ব্যক্তিত্বপূর্ণ এবং আত্মবিশ্বাসী অবস্থান জানানোর প্রচেষ্টা হিসেবে। তবে নেটিজেনদের অনেকে বলছেন, এমন অবস্থান নিলে ভবিষ্যতে তাকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে—তাহলেই বোঝা যাবে তিনি আসলেই প্রতিযোগিতার বাইরে রয়েছেন কিনা।
অপু বিশ্বাসের ফেসবুক পোস্ট শুধু একজন অভিনেত্রী নয়, একজন সচেতন নারী ও মায়ের অভিজ্ঞতা এবং আত্মমর্যাদার প্রকাশ। নিজের পথ নিজে তৈরি করার যে প্রচেষ্টা তিনি গ্রহণ করেছেন, সেটি যদি বাস্তবায়ন করতে পারেন, তবে তা হবে এক ইতিবাচক উদাহরণ। তবে এই ধরনের ‘পোস্ট-প্রতিক্রিয়া-পাল্টাপাল্টি পোস্ট’-এর সংস্কৃতি থামবে কিনা, সেটা সময়ই বলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ