
ছবি: সংগৃহীত
গলের ব্যাটিং স্বর্গে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটা ছিল সাহসী ও যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ব্যাটিং শুরু করার পর পরিস্থিতি বদলাতে সময় নেয়নি শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেশনেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ দল তখন যেন হতাশা আর শঙ্কার গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছিল। দলের পরিস্থিতি তখন এমন—আর একটি উইকেট হারালেই ম্যাচের রাশ প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
তবে সেই কঠিন সময়ে হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার—অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মুশফিকুর রহিম। প্রথম সেশন শেষে ড্রেসিংরুমে ফিরতে না হতেই আবারও মাঠে ফিরে তাঁদের সামনে ছিল চাপের পাহাড়। তবে চাপ নয়, আত্মবিশ্বাস এবং সংযম নিয়ে তারা নিজেদের খেলাটি সাজাতে শুরু করেন।
শুরুটা ছিল ধৈর্য্য নিয়ে, শুরুর কয়েক ওভার কাটিয়ে উঠতেই তারা হাত খুলে খেলতে থাকেন। বল বেছে বেছে মারতে থাকেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শ্রীলঙ্কান বোলারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। উইকেট পড়ার পর যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, সেটি ধীরে ধীরে মুছে যেতে শুরু করে শান্ত-মুশফিকের ব্যাটে।
দুজনের জুটি বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট পতনের আগেই ছুঁয়ে ফেলে সেঞ্চুরির মাইলফলক। ৩১.১ ওভারে সেঞ্চুরি জুটির দেখা পায় বাংলাদেশ। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, দুজনই নিজেদের অর্ধশতক তুলে নেন একে অপরের ধারাবাহিকতায়—একজন পায় এক বল আগে, আরেকজন পর। শান্ত ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে ছয় নম্বর ফিফটি তুলে নেন। অন্যদিকে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম দীর্ঘদিন পর আবার ফিফটির দেখা পান।
২০২৪ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক ইনিংসে ১৯১ রান করার পর থেকে ফর্মে খানিকটা ভাটা পড়ে মুশফিকের। এরপর আরও ১৩টি ইনিংস খেলেও তিনি পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। অনেক দিন পর সেই ফর্মহীনতার দেয়াল ভেঙে স্বরূপে ফিরলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
এই ইনিংসে শান্ত ও মুশফিকের ব্যাটিং ছিল অনেকটা ‘ক্লাসিক টেস্ট ব্যাটিং’-এর প্রতিচ্ছবি। মাটিতে বল রাখার প্রবণতা, অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছেড়ে দেওয়ার সচেতনতা এবং শর্ট বল সামাল দেওয়ার ধৈর্য্য—সবমিলিয়ে ইনিংসটি ছিল অনেকটা পাঠ্যপুস্তকীয়। বিশেষ করে শান্তর মধ্যে অধিনায়কোচিত দায়িত্ববোধ এবং ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত খেলার ধরন পরিবর্তনের মানসিকতা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।
দ্বিতীয় সেশনের পুরোটাজুড়েই শ্রীলঙ্কার বোলাররা বল করার মতো কোনো সুযোগ পাননি। তারা ব্যর্থ হন লাইন ও লেন্থ ধরে রাখতে, আর সেই সুযোগে শান্ত-মুশফিক জুটি দ্রুত রান তুলতে শুরু করেন। ফলে প্রথম সেশনে ছন্দ হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে বেশ মসৃণ গতিতে এগিয়ে যায়। রানরেটও ছিল চোখে পড়ার মতো, যা গলের মন্থর উইকেটে বিরল চিত্র।
এই দুজনের শতরানের জুটির প্রভাব পড়েছে পুরো দলের মানসিকতায়। প্রথম তিন উইকেট দ্রুত হারানোর ধাক্কা সামলে এখন বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছে পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। শুরুর বিপর্যয়ের পর যারা স্কোরবোর্ডে বড় রান দেখতে আশা হারিয়ে ফেলেছিল, এখন তারা আবার আশার আলো দেখতে শুরু করেছে।
এমনকি এখন দলীয় ইনিংসকে সাড়ে তিনশ বা চারশ’ রানের দিকেও নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কেননা উইকেট এখনো ব্যাটিং সহায়ক, আর শান্ত-মুশফিক দুজনই ভালো ছন্দে আছেন। তাদের পরেও আছেন লিটন দাস, মেহেদি হাসান মিরাজের মতো হাত। তাই এখন স্বপ্ন দেখাই যায়।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শান্ত ও মুশফিকের জুটি ১০০ রান ছাড়িয়ে গেছে, দুজনই ফিফটির গণ্ডি পেরিয়ে বেশ জমে গেছেন। দিনের বাকি সময়ে এই জুটি কতদূর যেতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, তাদের দৃঢ়তায় আবারও ম্যাচে ফিরেছে বাংলাদেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ