
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো জোট-বিচ্ছেদ, সমঝোতা ও নতুন বিন্যাস নিয়ে গতিময় হচ্ছে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ভোটের সময় নির্ধারণের পর বিএনপি প্রধান তারেক রহমান জোট গঠনে প্রস্তুতিই প্রকাশ করেছেন। এবারে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়ায় পাঞ্চ্যচল চলমান জটিলতা আরও প্রকট রূপ নিচ্ছে।
বিএনপির জোট ভিনদেশের বাইরে!
বিএনপি এবার সাম্প্রদায়িক ও মতপার্থক্য অতিক্রম করে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের আশায় রয়েছে। তারেক রহমান আগেই বলেছিলেন, “জনগণের ভোটে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত সব দলকে নিয়ে সরকার গঠন করা হবে।” জাতীয় সরকারের ধারণাই এখন বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, “নির্বাচনের তফশিল ঘোষিত না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো জোট হয়নি।” তবে বিএনপি যেকোনো সময় জোটের সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত––যদি তেমন প্রয়োজন দেখা যায়।
জামায়াত একা নয়, কিন্তু হাতে নেই স্পষ্ট জোট
জামায়াতে ইসলামী ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মতাদর্শিক পার্থক্যের কারণে বড় ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য অসম্ভব মনে করছে নিজেও। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, “জোট গঠনের আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়গুলো এখনও সুসম্বদ্ধ হয়নি।” ‘জুলাই সনদ’ যাচাই হলে ঐক্যের রূপরেখা আরও স্পষ্ট হবে।
পাঁচ দলীয় ইসলামি সমঝোতার পথে
ইসলামী আন্দোলনসহ আরও চার-দাঙ্গি দল (জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস) ২৫ জুন বৈঠকে বসবে। তারা ইসলামি মূল্যবোধে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে আলোচনা করছে।
ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান বলেন, “ইসলামপন্থি ভোট যাতে বিভক্ত না হয়, সে লক্ষ্যে সমন্বয় চলছে। পরিস্থিতি বুঝে আইকনিকভাবে ঘোষণা করা হবে।” খেলাফত মজলিস মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদের মতে, বৈঠক সভায় একাধিক বিষয় নির্ধারণ হবে––জোটকেন্দ্রিক কৌশল, প্রার্থী তালিকা, ও পরবর্তী পদক্ষেপ।
এনসিপি: সম্ভাবনা উন্মুক্ত, সিদ্ধান্ত শঙ্কিত
জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি এখনো জোটে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়নি। সদস্য সচিব আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, “স্বার্থ ও আদর্শ মিলে তো আমরা জোটে যেতে পারি, তবে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই।” জোট গঠনের ব্যাপারে দল নেতারা ‘এখনই কোনো না’ জানিয়ে দিয়েছেন, তবে ভবিষ্যতে জাতীয় স্বার্থ ও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিকল্পসমূহ বাহিরে রাখা হয়নি।
পারফরমেন্সঃ ভোটের মাঠে ধর্মীয়, রাজনৈতিক বিভাজন
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, মুসলিম-ইসলামিক দলগুলো এককভাবে ঐক্য গড়লে ভোট অংশগ্রহণে সুবিধা পাবে না––আদর্শগত বিভাজন ও স্থানীয় ভিত্তির ভিন্নতা তাঁদের পিছনে ফেলে দিচ্ছে। জামায়াতের অনেক আঞ্চলিক এলাকায় তিনি একা যেতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট সংগ্রহের বাইরে বিকল্প না হলেও, স্থানীয় আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে। এই প্রেক্ষাপটে ভোট তিন ভাগ হয়ে যেতে পারে––বিএনপি, জামায়াত ও আওয়ামী লীগপন্থিদের মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান বলেছেন, “বিএনপির নেতৃত্বে একটি জোট হবে, এর পাশাপাশি ইসলামি দলগুলোর জোট, বাম দলগুলির জোট এবং দায়বদ্ধতা ভিত্তিক আরো কয়েকটি জোট গঠিত হবে। এনসিপি-জামায়াত-ইসলামী দল নিয়ে তৃতীয় সম্ভাব্য জোটও উন্মুক্ত।”
আর কী হতে পারে?
যেহেতু আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত, তাই তারা স্বতন্ত্র বা অন্যান্য প্রতীকে নির্বাচন করতে বাধ্য হবে।
বরাবরের মতো একক জনাকীর্ণ বড় ভোট ব্যাংকগুলো ‘ধানের শীষ ও নৌকা’-র দিকে যাবে। তবে আওয়ামী প্রার্থী স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে ভোট বিভাজন ঘটাতে পারেন।
ফলে ভোটের ফলাফল কম ব্যবধানে সংঘর্ষমূলক হতে পারে, যদিও ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু থাকবে।
অতিমাত্রায় বিভাজিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে এবারের নির্বাচনের আগে চার-পাঁচ জোট ঘেঁষছে—বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় জোট, জামায়াতবিহীন অন্য ইসলামি জোট, জামায়াত-এনসিপি-ইসলামি পার্টি একত্রে এবং বাম ধারার একটি জোট। তবে এই সব সম্ভাবনার মধ্যে বিএনপির গড়নে থাকবে মূল পদক্ষেপ, যা ভোটের সীমানা অনেকটাই নির্ধারণ করবে। ঐক্য সৃষ্টি না হলে ধর্মীয় দলগুলোর ফলাফল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—তবে শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নাও নিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ